কৃষি ও প্রকৃতি

ভোলায় বারি ক্যাপসিকাম চাষে সফল কৃষকরা

ভোলার সদর ও দৌলতখান উপজেলার চরাঞ্চলে গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছিল বারি ক্যাপসিকাম-২। এতে সফলতা পেয়ে এবার বাণিজ্যিভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষকরা। ভোলার চরাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্যাপসিকাম চাষে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন তারা। তবে এ বছর পাইকারি বাজার দাম বেশি হলে তিন-চার গুণ লাভবান হতেন কৃষকরা।

Advertisement

ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে দেখা গেছে, চরের মো. নিজাম ফরাজী ও খোকন মাতা নামে দুই কৃষক পৃথকভাবে ১শ শতাংশ জমিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভোলার গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় বারি ক্যাপসিকাম-২ বাণিজ্যিভাবে চাষ করেছেন। ক্ষেতে ক্যাপসিকামের আকার বড় হওয়ায় খুশি তারা। ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রির জন্য পাঠাচ্ছেন ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। তবে ক্ষেত থেকে তুলে এ পর্যন্ত ১-২ বার পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছেন তারা।

মাঝের চরের কৃষক মো. নিজাম ফরাজী জানান, তিনি গত বছর গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় ৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক বারি ক্যাপসিকাম-২ চাষ করেছিলেন। প্রথমবারই তিনি ক্ষেতে ব্যাপক ফলন পেয়েছিলেন। বারি ক্যাপসিকাম-২ সাইজ বড় হওয়ায় বাজারের চাহিদা ও দাম বেশি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন: বেড়েছে তরমুজ চাষ, ভালো বিক্রির আশা কৃষকের

Advertisement

তিনি জানান, এ বছর তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বারি ক্যাপসিকাম-২ চাষ করেছেন। এতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তেমন না হওয়ায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ক্ষেত থেকে ক্যাপসিকাম তুলে দুইবার ঢাকার পাইকারি বাজারের বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। বর্তমানে বাজার দাম কম। এ বছর ৩ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে পারবেন। বাজার দাম ভালো হলে ৫-৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। আগামী বছর ২-৩শ শতাংশ জমিতে বারি ক্যাপসিকাম চাষ করবেন।

ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন মাঝের চরের কৃষক খোকন মাতাব্বর জানান, এ বছর প্রথমবার চাষ করেছেন বারি ক্যাপসিকাম। প্রথমবারই ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। বাজার দাম আরেকটু বেশি হলে আরও বেশি লাভবান হতেন। আগামী বছর অনেক জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করবেন।

মদনপুর চরের কৃষক মিন্টু পণ্ডিত জানান, তারা যে হাইব্রিড জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করেন, সেটি করে তেমন একটা লাভবান হতে পারেন না। তবে তাদের আরেক কৃষক নিজাম ফরাজী নতুন একটি জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। তাই আগামী বছর থেকে তারাও বারি ক্যাপসিকাম-২ চাষ করবেন।

আরও পড়ুন: একই জমিতে তিন ফসল চাষে সফল মুজিবুর

Advertisement

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভোলার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গাজী নাজমুল হাসান জানান, গত বছর একজন কৃষক দিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত বারি মিষ্টি মরিচ-২ বা বারি ক্যাপসিকাম-২ পরীক্ষামূলক চাষ করিয়ে সফলতা পেয়েছেন। পরে এ বছর তাদের থেকে বীজ নিয়ে দুজন কৃষক ১শ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এ ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। ক্ষেতে ব্যাপক ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুশি।

তিনি জানান, ভোলার চরাঞ্চলে কৃষকরা প্রতি বছরই আস্তা জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করে থাকেন। ওই জাতের ক্যাপসিকামের এক কেজি বীজের দাম আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তবে তাদের উদ্ভাবিত বারি ক্যাপসিকাম-২ জাতের বীজের দাম মাত্র ৩০ হাজার টাকা। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক কম। এ ছাড়াও বারি ক্যাপসিকাম-২ এর থেকে আবার আগামীতে চাষের জন্য বীজ সংগ্রহ করা যায়। তাই এ জাতের ক্যাপসিকাম চাষে কৃষকদের পাশে সব সময় তারা রয়েছেন বলে দাবি করেন।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এসইউ/এএসএম