অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গণপরিবহনে যাত্রীবেশে, পথচারী কিংবা বিভিন্ন পেশার ছদ্মবেশে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। প্রায় প্রতিদিনই মহানগরীর গুলিস্তান, তিন বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালসহ জনাকীর্ণ এলাকায় পথচারী ও যাত্রীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে জীবনও যাচ্ছে। তাই সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। চলতি মাসেই শতাধিক ব্যক্তি তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল সোমবার পর্যন্ত কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৭৩ জন। তাদের মধ্যে গতকালই ভর্তি করা হয় সাতজনকে। এছাড়া অন্যান্য হাসপাতালেও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভাবনার বিষয় হচ্ছে, আগে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ঈদ কিংবা উৎসবকে কেন্দ্র করে তাদের অপতৎপরতা চালাতো। পুলিশের প্রস্তুতিও থাকতো সে রকম। কিন্তু এখন সারা বছর ধরেই তারা তৎপর রয়েছে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ফেরিওয়ালা, চা ও ডাব বিক্রেতা সেজে ঘুরে বেড়ায়। আবার অনেক সময় সাধারণ যাত্রী সেজে দলবদ্ধভাবে বাসে ভ্রমণ করে। কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাবার বা পানীয় খাইয়ে অথবা নাকে চেতনানাশক গ্যাস প্রয়োগ করে লোকজনকে অচেতন করা হয়। মাত্রাতিরিক্ত চেতনানাশক দেওয়া হলে অচেতন ব্যক্তিদের কেউ কেউ মারাও যান। অনেকে চিরতরে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন। পুলিশের ভাষ্যমতে, রাজধানী ও এর আশপাশে অজ্ঞান পার্টির অন্তত ৩০০ সদস্য রয়েছে। এরা পুলিশের হাতে অনেক সময় ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে গিয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। গত রমজান মাসে অজ্ঞান পার্টির ৫০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরা জামিনে বের হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা বন্ধ হবে না কোনোদিন। অথচ জননিরাপত্তার স্বার্থে এদের অপতৎপরতা বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে করেও অজ্ঞান পার্টি তৎপরতা চালাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব যানবাহন ছিনতাইয়ের কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। গণপরিবহনের অপ্রতুলতার সুযোগে যাত্রী উঠানোর নাম করে তুলে নিয়ে গিয়ে কেড়ে নিচ্ছে সর্বস্ব।দিনের পর দিন এ অবস্থা চললেও দেখার যেন কেউ নেই। এভাবে চলতে পারে না। এসব অপতৎপরতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। ভয় এবং আইনি জটিলতার কারণে ভুক্তভোগীর অনেকেই মামলা করেন না, পুলিশকে জানান না। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের নাকের ডগায় অপরাধ সংঘটিত হলেও তারা অনেক সময় থাকে নির্বিকার। এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সর্ষেয় ভূত থাকলে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে। অজ্ঞান পার্টির সদস্য যারা ধরা পড়ে তারা যেন জামিন না পায় সে ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে। মানুষজন যেন ঘর থেকে বেরিয়ে আবার ঠিকঠাক ঘরে ফিরতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে। জনসচেতনতাও এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। এইচআর/পিআর
Advertisement