আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন নানা দিক থেকেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আজ সকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। ৬৭ বছরের প্রাচীন এই দলটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এই সংগঠনের ভূমিকা বাঙালির অগ্রযাত্রার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখায়। অবশেষে একসাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছে এক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। ‘আওয়াম’ অর্থাৎ জনগণের দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ৬৭ বছর ধরে মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে যে দলটির নাম জড়িত সেই দলের পথচলা কিন্তু অতটা মসৃণ ছিল না। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে চরম আঘাত হেনেছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি। তারপর একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়েছে দলটিকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের হাল ধরেন। ১৯৯৬ সালে আবার ক্ষমতায় নিয়ে যান দলকে। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল বিরোধী শক্তি। ২৪ জন নেতা-কর্মীর জীবন গেলেও বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তার হাতেই এখন বাংলাদেশের নেতৃত্ব। ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।’ সত্যি বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হচ্ছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ৩১ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বেড়েছে গড় অায়ু। মাতৃমৃত্যু কমেছে। কমেছে শিশুমৃত্যুর হারও। প্রযুক্তিখাতে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য।বিদ্যুৎ উৎপাদনেও সাফল্য এসেছে। প্রবাসী আয় বেড়েই চলছে। নানা দিক থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সূচক ঊর্ধ্বগামী। যুদ্ধাপরাধের বিচার করে কলঙ্কমোচনের পথে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে আলোচিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। মাত্র কেদিন আগেই বাংলাদেশ সফর করে গেলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধানও। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত বাংলাদেশ স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। আওয়ামী লীগই এমন স্বপ্ন দেখাচ্ছে দেশের মানুষকে। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এর মধ্য দিয়েই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হয়। দলে গণতান্ত্রিক চর্চারও পথও হচ্ছে এই সম্মেলন। রাজনৈতিক দলগুলোই দেশ চালায়। কাজেই দল যদি গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত হয় শাসন ব্যবস্থায়ও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন দেশবাসীকে নতুন আশায় উদ্দীপ্ত করছে। আগামী দিনের যোগ্য নেতৃত্ব বেরিয়ে আসুক এই সম্মেলন থেকে এটিই কাম্য। আমরা আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি। এইচআর/এবিএস
Advertisement