বিনোদন

মণিহারে সাড়া ফেলেছে আবরারকে নিয়ে সিনেমা ‘রুম নম্বর ২০১১’

যশোরে মুক্তি পেয়েছে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নিয়ে সিনেমা ‘রুম নম্বর ২০১১’। শুক্রবার যশোরের মণিহার সিনেপ্লেক্সে সিনেমাটির প্রদর্শন শুরু হয়। এই সিনেমায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির বলি হওয়া শিক্ষার্থী ফাহাদের মর্মন্তুদ ঘটনা সেলুলয়েডের পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দল।

Advertisement

মুক্তির প্রথম দিনেই স্থানীয় দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলেছে সিনেমাটি। এসব দর্শকের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী।

আবরার ফাহাদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর যাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। ঘটনার পাঁচ বছর পর তাকে নিয়ে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রটি দেখলেন যশোরের ডিসি, এসপিসহ ছাত্রজনতা। তারা এসব নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে এ ধরনের সিনেমা আরও বেশি নির্মাণে তাগিদ দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন পর শুক্রবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ মানস বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘আসলেই আবরারের মৃত্যু ওই সময়ে স বশ্রেণির মানুষের মাঝে নাড়া দিয়েছিল। কিছু লোক প্রতিবাদ করলেও অনেকেই প্রতিবাদ করতে পারেননি নানা কারণে। রাজনীতিক পট পরিবর্তনের পর তাকে নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী সিনেমা তৈরি করেছে। গল্পটি হৃদয়বিদারক। এরকম নির্যাতন বা মৃত্যু নিয়ে যত ঘটনা আছে; সেগুলো নিয়ে সিনেমা তৈরি করা উচিত। যাতে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারবে। এই ধরনের নির্যাতন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ হোক।’

Advertisement

যশোরের কবি মামুন আজাদ বলেন, ‘এ ধরনের মুভি জাতিকে অনুপ্রেরণা দেয়। ঘৃণিত ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে সে ধরনের ছবি আরও দেখতে চাই। আবরার হত্যায় কয়েকজন আটক হলেও দ্রুত আবরার হত্যায় জড়িতদের রায় ঘোষণার দাবি জানাই।’

চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ জিসান আহমেদ এবং চিত্রনাট্য রচনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আনন জামান। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।

সিনেমাটির কলাকৌশলী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজন্যা বলেন, ‘কোন রাজনৈতিক দৃষ্টভঙ্গির বিষয় নয়। এটা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প; আমাদের গল্প। এ ধরনের ইতিহাস বাস্তবভিত্তিক মৌলিক কাজের অংশ হতে পেরে গর্বিত ও আনন্দিত।’

সিনেমাটির পরিচালক শেখ জিসান আহমেদ বলেন, ‘রুম নম্বর ২০১১’ সরাসরি বায়োপিক নয়। আবরারের ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। আমরা নির্মাণের আগে তার পরিবার, বন্ধু, স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। আবরার সম্পর্কে সবকিছু জেনেই নির্মাণে হাত দিয়েছি।’

Advertisement

আবরারের ঘটনাটি বুয়েটের হলেও এটির শুটিং হয়েছে জিসানের ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে সিনেমাটি নির্মাণ করতে গিয়ে নানান বাধার শিকার হয়েছি। পরে রাজনীতিক পট পরিবর্তনের পর মুভিটার কাজ শেষ করেছি। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিক বলি হয়ে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এটাই কাম্য আমাদের। বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

প্রথম দিনের চারটি শোতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বলেও জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। সিনেমা হলটির ব্যবস্থাপক ও হিসাবরক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘এটা আসলেই সিনেমা নয়; বাস্তবে ঘটে যাওয়া বেদনা জাগানো গল্প। সেটা ফুটিয়ে তুলেছে কিছু শিক্ষার্থী। এই ধরনের সিনেমা আরও তৈরি হওয়া উচিত।’

সিনেমা দেখার পর যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আবরারের সিনেমাটি বাংলাদেশের বিগত সময়ের বাস্তব চিত্র। শুধু শিক্ষার্থী নয়, সারাদেশে একটি ভীতিকর পরিবেশ ছিল। বিগত সময়ে তারাই চাকরি পেতো; যারা তাদের চেতনা লালন করতো। ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা দুটি বার্তা দিতে চাই। আবরারের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের এই ঘটনা দেশে আর দ্বিতীয়টি না ঘটুক। সেই সঙ্গে আবরারদের চেতনায় স্বাধীন সার্বভৌম আত্মমর্যাদা নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।’

এইচআরএম/এলআইএ/এএসএম