মুক্তি প্রতীক্ষিত দুটি সিনেমা শাকিব খানের ‘বরবাদ’ ও সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’। সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে দুই সিনেমার পোস্টার। দুটোই জানান দিচ্ছে, ছবি দুটি হতে যাচ্ছে অ্যাকশনধর্মী। তবে সিনেমার পোস্টার ও ঘরানা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তরুণ চলচ্চিত্রকার আসিফ ইসলাম।
Advertisement
গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে দুই সিনেমার পোস্টার শেয়ার করে আসিফ লিখেছেন, ‘বাস্তবজীবনে ইতিমধ্যে আমরা যথেষ্ট রক্তপাত এবং সহিংসতা দেখেছি। আমাদের সিনেমাগুলোও কেন এত রক্তপাত এবং সহিংসতায় ডুবে থাকবে? আমরা কি এসবের বদলে সুন্দর কিছু তৈরি করতে পারি না? আমজনতার জন্য যারা ছবি বানান, আর একটু সচেতন হওয়া তাদের দায়িত্ব। মনে হলো আরকি।’
আসিফের এই পোস্টের পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করেছেন অনেকে। মারিয়া হোসেন বলেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড সিনেমাই কেন যেন এই জনরার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। গল্প বলার চেয়ে অ্যাকশন-ভায়োলেন্স বেশি। দর্শকরাও এগুলো লুফে নিচ্ছে। খুব কম দর্শক শুধু গল্পকেন্দ্রিক সিনেমা পছন্দ করছে। উদাহরণ হিসেবে বলি, এবারের “স্কুইড গেম” সিজন কেন আগের মতো ভায়োলেন্ট না, কেন বেশি ড্রামায় নজর দেওয়া হয়েছে – এই অভিযোগ উঠেছে।’
ফাতেমা জোহরা হক লিখেছেন, ‘একটি গভীর উপলব্ধির কথা বলেছেন। শিল্প যদিও বাস্তবতাকে তুলে ধরে, তবে ভালো কিছুর অনুপ্রেরণাও দিতে পারে। নির্মম বাস্তব ও সুন্দর কিছুর মধ্যে ভারসাম্য রেখে যদি গল্পটা বলা হয়, সেটা ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে, চিন্তা-উদ্দীপকও হতে পারে। অতিরিক্ত সহিংসতা-নির্ভর না হয়ে কীভাবে দর্শকদের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হওয়া যায় চলচ্চিত্র নির্মাতারা সেই পথ খুঁজে করতে পারেন।’
Advertisement
মো. আমিনুর ইসলাম লিখেছেন, ‘সুন্দর কথা লিখেছেন। সিনেমা মানেই রক্ত না। এই রক্ত দেখে বাচ্চারা কী শিখবে, মানুষের অনুভূতি কি জাগবে, নতুন প্রজন্ম কী শিখবে? আমার মনে হয় এরা কোনো গল্প খুঁজে পায় না। শুধু কাটাকাটি, কোনো ড্রামা নাই, শুধু আগুন, চাকু, রক্ত, গুলি! বাংলাদেশের পরিচালক-লেখকদের অনেক সচেতন হওয়া উচিত। এইসব গল্প ফ্যামিলি নিয়ে দেখার মতো গল্প না।’
চলচ্চিত্রকার নুরি বিলজ সিলানের সঙ্গে আসিফ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
কী বার্তা দিতে চেয়েছেন চলচ্চিত্রকার আসিফ ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘যে পরিস্থিতির দিকে আমরা যাচ্ছি, এই সময়ে ফিল্মে এসব দেখানো কতটা যৌক্তিক? সাউথ ইন্ডিয়া, রণবীর কাপুরের ছবির বাতাস এসে বাংলাদেশে লাগছে। অনেকে বলছেন “প্রিয় মালতি”র মতো সিনেমাও তো হচ্ছে। কিন্তু প্রিয় মালতির রিচ কম। শাকিব-সিয়ামের সিনেমার রিচ অনেক বেশি। আমি মনে করি, প্রিয় মালতি ছবির দর্শকদের এক ধরনের আউটলুক আছে। কিন্তু শাকিব-সিয়ামের ছবি যেসব দর্শকের জন্য বানানো হয়, তাদের ভালো-মন্দ বেছে নেওয়ার ছাকনিটা দুর্বল। তারা পর্দায় যেটা দেখবেন, সেটাই তাদের প্রভাবিত করবে, চিন্তাশীলদের করবে না। তাই যারা এসব ছবি বানাচ্ছেন, তাদের একটু সচেতন হতে অনুরোধ করবো।’
গত বছর বিশ্বের কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের বানানো ‘নির্বাণ’ ছবিটি দেখিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন আসিফ ইসলাম। তিনি বলেন, “নির্বাণ”-এর দর্শক যারা, তাদের ভালোমন্দ বাছাই করার জ্ঞান আছে। আমজনতার জন্য বানানো ছবি তৈরির ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকা উচিত। কারণ শাকিব খান ওই দর্শকদের আইডল। আমরা আশপাশে অনেক রক্ত দেখছি। পর্দায় আমাদের উচিত সুন্দর কিছু দেখানো।’
Advertisement
ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করবেন আসিফ ইসলাম। এ যাত্রায় তিনি কাজ করছেন যাত্রাশিল্পীদের নিয়ে। চলতি বছরই ছবিটি বিভিন্ন উৎসবে পাঠাবেন। তার বানানো ‘নির্বাণ’ মস্কো, কাজাখস্তান, ফ্রান্স ও নেপালের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, কাজাখস্তানের ইউরোশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও ফ্রান্সের গাঙ্গ সু স্যান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ছবিটি।
কাজাখস্তানের ইউরোশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আপ্লুত এই তরুণ নির্মাতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই উৎসবের জুরি প্রধান ছিলেন আমার প্রিয় নির্মাতা নুরি বিলজ সিলান। তার সিনেমা “ডিসট্যান্ট”, “উইন্টার স্লিপ” দেখে সিনেমা বানানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তার কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড পাওয়া আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।’
আরএমডি/জেআইএম