হ্যাঁ-না, নেই-নিচ্ছি, দেখি-দেখছি; এসব করেই কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। এ লম্বা সময়ে কখনো মনে হয়েছে, আবার জাতীয় দলে ফিরবেন তামিম ইকবাল। আবার একসময় তামিমের কথাবার্তায় বোঝাই যাচ্ছিল, জাতীয় দলে খেলার আগ্রহ নিঃশেষ হয়ে গেছে।
Advertisement
কিন্তু সিলেটে বিপিএল যাওয়ার পর হঠাৎ মনে হলো, বাতাস বদলেছে। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর সাথে দুই দফা কথা বলার পর ২-৩ দিন সময় চেয়েছিলেন নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর। সেই সময়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তামিম জানিয়ে দিলেন- ঢের হয়েছে; জাতীয় দলে আর নয়।
তামিম ইকবালের এ অবসরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তার সঙ্গে খেলা মোহাম্মদ আশরাফুল। আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সাথে আলাপে আশরাফুল বলেন, ‘তামিমের অবসর সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ আমার মনে হয় তামিম আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চায় না কিংবা তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে আর দীর্ঘ করতে উৎসাহী না। আমার ধারণা, যদি তামিম জাতীয় দলের হয়ে খেলা চালিয়ে যেতে চাইতো, তাহলে আরও আগেই জাতীয় দলে ফিরে আসতো।’
‘যেহেতু ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে তাকে নেয়নি, তারপর থেকে অনেক গল্পই শুনে আসছিলাম। বলা হচ্ছিল, তামিম ঢুকবে। আবার কখনো জানা গেছে, তামিম আর ফিরবে না জাতীয় দলে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য সবাই চাচ্ছিল। আমি মনে করি, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ৩-৪টা ম্যাচের জন্য জাতীয় দলে ফিরে আসাকে আমি বড় করে দেখতে নারাজ।’
Advertisement
‘হ্যাঁ, যদি সে আরও এক-দুই বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চাইতো, তাহলে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিলে আমিও হতাশ হতাম। কিন্তু এখন আমি মনে করি, সে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। মাত্র ৩ ম্যাচের জন্য জাতীয় দলে ফেরার কোনো অর্থ হয় না। আগের প্রেসিডেন্ট তো শুধু প্রেসের সঙ্গে বসে গল্প করতেন। তামিমও গল্প করতো। এবার লিপু ভাইরা বসেছেন। দুইদিন পর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যেহেতু তামিম আর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চায় না, তাই আমি মনে করি, ঘোষণাটা সময়মতোই এসেছে।’
তামিম খেলোয়াড় হিসেবে কেমন ছিলেন? আশরাফুলের মূল্যায়ন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ৪-৫ জনের একজন। ওপেনার হিসেবে হয়তো এক নম্বর। নতুন বলে ব্যাটিং করা কঠিন। মুশফিক টেকনিক্যালি বাংলাদেশের সেরা ব্যাটারদের অন্যতম। সাকিব অলরাউন্ডার হিসেবে সেরাদের একজন। তামিমও কিন্তু বিশ্বের টপ ওপেনারদের কাতারের। একজন ওপেনার হিসেবে যে রেকর্ড গড়েছে, সেটা দারুণ বড় অর্জন। কারণ সে বিশ্বের সব দলের সেরা ও ফ্রন্টলাইন বোলারদের বিপক্ষে নতুন বলে মোকাবিলা করেছে। ডমিনেট করেছে। তাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে।’
তামিমের ক্যারিয়ারকে ‘অসাধারণ’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল আরও বলেন, ‘তামিমের ক্যারিয়ার তো বিরাট। বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যান তিন ফরম্যাট মিলে ১৫ হাজার রান করেছে। ২৫টি সেঞ্চুরি। এটা আমাদের দেশের ক্রিকেটের জন্যই এক বিরাট অর্জন, প্রাপ্তি। যে দলটি সব ফরম্যাটেই প্রায় র্যাঙ্কিংয়ে নিচের দিকে, সেই দলের একজন ব্যাটার বিশ্বের সব বড় বড় দলের বোলারদের যেভাবে ডমিনেট করেছে, সেটা অবিশ্বাস্য।’
‘গত ২০ বছর তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশ্বের সব বাঘা বাঘা বোলারের ওপর চড়াও হয়ে ভয়ডরহীন ও আগ্রাসী ব্যাটিং করেছে। সেটা কল্পনাও করা যায় না। অবশ্যই ১০টা টেস্ট খেলুড়ে দলের মধ্যে গত দেড় যুগের রেকর্ড, পরিসংখ্যান ও পারফরম্যান্সকে নিয়ামক ধরলে সব দল মিলে ৪ থেকে ৫ জন সেরা ওপেনারের মধ্যে তামিম থাকবে বলে আমার ধারণা।’
Advertisement
এআরবি/এমএমআর/এমএস