জাতীয়

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : দেশে ফিরেই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ১৫ যুবক

মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে দেশে এসেও স্বজনদের সান্নিধ্যে আসতে পারেননি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া ১৫ বাংলাদেশি। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের কারণে বিমানবন্দরেই কেটেছে আজ সারাদিন। মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ১৫ বাংলাদেশি। বিমানবন্দরে এসেই পড়তে হয় বিভিন্ন সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের ‘গ্যাড়াকলে’।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেশে ফেরত আসা যুবকরা শাহজালাল বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন বলে জানান তাদের স্বজনরা। এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল স্বজনদের মাঝে। সন্তানকে ফিরে পাবার ব্যাকুলতায় পথ চেয়ে বসে আছেন মা। তবে বুধবার তারা বাড়ি ফিরবেন বলে আশা করছেন স্বজনরা। প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর দেশে আসা ১৫ বাংলাদেশির মধ্যে ১৩ যুবকই সিলেটের ও দুইজন মাদারীপুরের।

দেশে ফেরা সিলেটের যুবক রুবেল আহমদের ভাই রাসেল আহমদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, দেশে ফেরত আসাদের মধ্যে রয়েছেন সিলেটের সদর উপজেলার ঘোপাল এলাকার মো. চমক আলীর ছেলে রুবেল আহমদ, দক্ষিণ সুরমার লালারগাও এলাকার জাবের, বিশ্বনাথ উপজেলার পালরচক গ্রামের মাছুম আহমদ এবং বিয়ানীবাজারে আরেক যুবকসহ বিভিন্ন উপজেলার ১০ জন।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওই ১৫ জন দেশে পৌঁছান। শাহজালালে আসার পর রুবেলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিমানবন্দরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি বলেন, রুবেলের সঙ্গে একই ফ্লাইটে দেশে আসা সিলেটের ১৩ জনই বিশ্বনাথ উপজেলার কাঠলীপাড়া গ্রামের চমক আলীর ছেলে আদম ব্যাপারী রফিকুল ইসলাম রফিকের মাধ্যমে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন।

Advertisement

এর আগে, সোমবার দুপুরে মা রাজিয়া বেগমকে ফোন দিয়ে দেশে ফেরার কথা জানিয়েছিলেন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ঘোপাল গ্রামের রুবেল আহমদ।

তিউনিশিয়া থেকে দেশে ফেরা রুবেলের ভাই রাসেল আহমদ জানান, ২০১৮ সালের জুন মাসে ১০ রমজান আদম ব্যাপারী রফিকুল ইসলাম রফিকের মাধ্যমে রুবেলকে লিবিয়া পাঠানো হয়। রফিক লিবিয়ায় থাকা তার পুত্র পারভেজের মাধ্যমে ইতালি পাঠানোর ব্যবস্থা করে। লিবিয়ার পৌঁছার আগে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নেয় রফিক।

এরপর গত ৯ মে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর আগে তাদের কাছ থেকে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয় তারা। ওই টাকাগুলো নিজের বসতঘরের পাশের চার শতক জায়গা বিক্রি করে দেয়া হয়। সবমিলিয়ে ৯ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

রুবেলের মামা আবুল হোসেন জানান, দালাল রফিক তাদের সাথে কথা রাখেনি। কথা ছিল বাংলাদেশ থেকে বিমানে লিবিয়া এবং সেখান থেকে মাছ শিকারের জাহাজে করে তাদের ইতালি পাঠানো হবে। প্লাস্টিকের বেলুনের মতো নৌকায় তুলে সাগর পাড়ি দেয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

Advertisement

উল্লেখ্য, সংঘাতময় লিবিয়ার জুয়ারা থেকে অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার পথে গত ১০ মে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ৩৯ বাংলাদেশির একটি তালিকা সরকারের পক্ষ প্রকাশ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত পাচারকারীচক্রের তিন সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এছাড়া নৌকা ডুবে নিহত একজনের পরিবারের পক্ষ থেকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

ছামির মাহমুদ/বিএ