জাতীয়

‘আরেকজন শিরিন কিংবা আঞ্জুমানের জন্য ওঁৎ পেতে ছিল মনছুর’

‘শুক্রবারের ছুটির দিন। চট্টগ্রামের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়স’ লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন তরুণী আয়েশা। রিকশায় চড়ে বাসায় ফেরার পথে নগরের জাকির হেসেন রোডে খুলশি মার্টের সামনে আসতেই হঠাৎ তার ব্যাগটি ধরে টান দেয় ছিনতাইকারীরা। নিজেকে সামলাতে না পেরে চলন্ত রিকশা থেকে পড়ে যান আয়েশা। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। প্রাণে বেঁচে গেলেও চোখ বাঁচাতে পারেননি আয়েশা। রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। তবে সবার ভাগ্য আবার আয়েশার মতো হয় না।’

Advertisement

নগরে ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে এমন মর্মস্পর্শী কথাগুলো লিখেছেন চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

রোববার (১৯ মে) নগরের পলোগ্রাউন্ড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী মনসুর (৪০)। এরপর আজ সকাল ১০টার দিকে সেই মনসুরের নৃশংসতার শিকার কয়েকজনের করুন পরিণতির কথা তুলে ধরে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দেন ওসি মোহাম্মদ মহসীন।

পুলিশ জানায়, নিহত ছিনতাইকারী মনসুর রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের হ্যাডম্যান পাড়ার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। মনছুরের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় আটটি ছিনতাই মামলা রয়েছে।

Advertisement

মোহাম্মদ মহসীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘২০১৭ সালের ১৩ জুন। ঈদের বাজার করতে পটিয়া থেকে শহরে এসেছিলেন শিরিন। জামালখান এলাকায় চলন্ত রিকশা থেকে শিরিনের ব্যাগ হ্যাচকা টান দেয়। ব্যাগের পাশাপাশি নিজেকেও সামলাতে পারেননি শিরিন। রিকশা থেকে নিচে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১৯ জুন মারা যান শিরিন। তারও আগে ২০১৩ সালের ১৯ মে হালিশহরে একই কায়দায় ছিনতাইয়ে প্রাণ হারান গৃহবধূ আঞ্জুমান আরা।’

ওসি জানান, ‘চট্টগ্রামে চলন্ত রিকশা বা ইজিবাইক থেকে নারীদের ব্যাগ ছিনতাই করে কয়েকটি গ্রুপ। তারই একটা গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় মনছুর। তার নেতৃত্বে কাজ করে সেলিম, ইউসুফসহ আরও কয়েকজন। তারা সিএনজি করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে। এরপর সুবিধাজনক স্থানে যাত্রীর ব্যাগ ধরে টান দেয়। এ রকম ছিনতাইয়ে তারা যাত্রীর প্রাণের মায়াও করে না। তাদের ভয়ঙ্কর এমন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে পঙ্গুত্বও বরণ করতে হয়েছে অনেককে।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন গতকালের (১৯ মে) ঘটনার বিবরণ দিয়ে লিখেছেন, ‘কি কাকতালীয়! ৬ বছর পর আবারও ১৯ মে কিংবা দুই বছর পর আবারও একটি ঈদের মওসুম! আরেকজন শিরিন কিংবা আঞ্জুমানের জন্য ওঁৎ পেতে ছিল মনছুর। কিন্তু টিম কোতোয়ালী নতুন শিরিন কিংবা আঞ্জুমান হতে দেয়নি কাউকেই। নগরের কাঠের বাংলো এলাকায় সিএনজিযোগে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে তাদের চ্যালেঞ্জ করে এসআই কে এম তারিকুজ্জামান এবং তার টিম।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই সিএনজি টান দেয় মনছুর। এক পর্যায়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে ঢুকে পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়ে। এ সময় মনছুরের দল পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ আহতাবস্থায় মনছুরকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠালে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনাস্থল থেকে একটি দোনলা বন্দুক ও ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। বন্দুকযুদ্ধে এসআই তারিকুজ্জামান এবং এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস আহত হন।’

Advertisement

এমবিআর/জেআইএম