জাতীয়

শিশু রাইফার মৃত্যু : আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন বাবা রুবেল খান

চট্টগ্রামে ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাইফার বাবা ও সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খান। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি মামলার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

রুবেল খান বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে আমি সন্তুষ্ট নই। হাসপাতালে রাইফাকে ভর্তির পর থেকে তার সঙ্গে যা হয়েছে সেখানে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট। গলা ব্যথার জন্য আমার মেয়েকে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাকে যখন অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়া হয়, তখন সে রিঅ্যাক্ট করে। আমি বিষয়টি দেখে অ্যান্টিবায়োটিক না দেয়ার কথা বলি। তারপরও দ্বিতীয়বার অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। ফলে তার খিঁচুনি শুরু হয়। একপর্যায়ে আমার মেয়ে মারা যায়। চিকিৎসকদের এমন ভুল চিকিৎসার বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে আসেনি।’

তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হয়ে এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়, তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ঐ সময় থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান ছিল না। শিশু কন্যা রাফিদা খান রাইফাকে অসুস্থতার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের ভোগান্তি চরমে ছিল।’

Advertisement

‘শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদান করেননি বলে শিশুর পিতা-মাতা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যা এ তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।’

প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- ‘চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত তিনজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ম্যাক্স হাসপাতালের সার্বিক ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অতিদ্রুত সংশোধন করা অপরিহার্য। কর্তব্যরত নার্সগণ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিপ্লোমাধারী থাকার নিয়ম থাকলেও উক্ত হাসপাতালে তা নেই। ডিপ্লোমা নার্স দ্বারা চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক দ্রুত ও আন্তরিক সেবা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং রোগীর অভিভাবককে যথাসময়ে রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসর ব্যাপারে সর্বশেষ পরিস্থিতি অবগত করতে হবে।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির পর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত টিমও শিশু রাইফার মৃত্যুতে ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও শুভ্র দেবকে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে দিয়েছে ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন পরিদর্শন ও যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে ১১টি ত্রুটির (অনিয়ম) প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক রুবেল খানের আড়াই বছরের শিশু রাইফার মৃত্যুর পর চিকিৎসক দেবাশীষকে শোকজ করে ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দেবাশীষ সেটি গ্রহণ না করে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। চিকিৎসক শুভ্র দেব শোকজ নোটিশ গ্রহণ করে জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

গত ২৮ জুন জ্বর ও গলা ব্যথা নিয়ে চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে আড়াই বছরের শিশু রাইফাকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তির ৩০ ঘণ্টা পর মারা যায় শিশু রাইফা।

আরএস/এমএস