ইজি অব ডুইং বিজনেস অর্থাৎ সহজে ব্যবসা করার মাপকাঠির সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। তবে ২০১৭ সাল থেকে প্রথমবারের মতো এ র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। শুধু তাই নয় আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০ এর নিচে দেখতে চায় সরকার। এজন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় যার একটি পথনকশা সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ পথনকশা আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ডুইং বিজেনেস সূচক ১০০ এর নিচে আনার জন্য প্রতিটি সূচকের উপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে আরও বেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ন্যাশনাল কমিটি ফর মনিটরিং এ্যান্ড ইমপ্লিমেনশন কার্যকর। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে এ সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, এটিকে আরো কার্যকর করা হবে। বাণিজ্যিক ও শিল্প কারখানায় বৈদ্যুতিক সংযোগ ৪২৮ দিনের স্থলে ২৮ দিনের মধ্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে দিনের সংখ্যা আরও কমিয়ে আনা হবে। বাণিজ্যিক ও শিল্প কারাখানার ভবন নির্মাণ রাজউক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতিপত্র ৩৫৯ দিনে স্থলে ৬০ দিনে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সুরক্ষা সংক্রান্ত সূচকে আইনের ৬টি ধারার পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। বিনিয়োগ সহজীকরণে প্রয়োজনে আরও আইনের ধারার পরিবর্তন আনা হবে।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কী কী অর্জন করেছে সে বিষয়ে উল্লেখ থাকছে বাজেট বক্তৃতায়। অর্জনের মধ্যে রয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৮ প্রণয়ন। এ আইনের ফলে ট্রেড লাইসেন্স, জমি নিবন্ধন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ ২৭টি ক্যাটাগরির সেবা এক জায়গায় পাওয়া যাবে। ফলে কোনো বিনিয়োগকারীকে প্রাথমিক অনুমোদন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য আর বিভিন্ন কার্যালয়ে ঘুরতে হবে না। অনলাইনে সেবা পাওয়া যাবে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথম নয় (জুলাই থেকে মার্চ) মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১২৮২টি শিল্প প্রকল্পের নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট হালনাগাদ করা হয়েছে। ওয়েবমেইল, ফেসবুক পেজ চালু করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ২০ মেগাবাইটে উন্নীত করা হয়েছে। বিআইডিএ এর অনলাইন সার্ভিস ট্র্যাকিং সিস্টেম (বিওএসটি) চালু করে এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া আইটি বিষয়ক সেবা ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (ওআরএস) লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে চালু রয়েছে। অন এ্যারাইভাল ভিসা, ই-ভিসাসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে।
Advertisement
গত নভেম্বরে ইজি অব ডুইং বিজনেস-২০১৮ (সহজে ব্যবসা করার মাপকাঠি) প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ওই প্রতিবেদনে এক ধাপ পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। এর আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। ব্যবসায় শুরু, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুৎ প্রাপ্যতা, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণের প্রাপ্যতা, ছোট বিনিয়োগের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্যসহ মোট ১০টি সূচক পর্যালোচনা করে এ র্যাঙ্কিং তৈরি করা হয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ১০ সূচকের মধ্যে পাঁচটিতে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। ব্যবসার শুরুতে ৯ ধাপ, ঋণের প্রাপ্যতায় দুই ধাপ, ছোট বিনিয়োগের সুরক্ষা ৬ ধাপ, কর পরিশোধ ও অসচ্ছলতা দূর করার সূচকে ১ ধাপ করে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে ভালো করেছে অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি সূচকে। এই সূচকে ৮ ধাপ উন্নতি হয়ে ১৩০তম স্থানে আছে।
ছোট বিনিয়োগের সুরক্ষা বাংলাদেশে ভালো। ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। ২০১৬ সালের ৩১ মে পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে ব্যবসার জন্য তুলনামূলক সহজ স্থান প্রতিবেশী ভারত। গেল বছরের তুলনায় ৩০ ধাপ এগিয়ে দেশটি সহজ ব্যবসার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে ১০০তম স্থানে রয়েছে। গত বছর ভারতের অবস্থান ছিল ১৩০তম।
সহজ ব্যবসার সূচকে এক নম্বর স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। এরপরেই রয়েছে সিঙ্গাপুর। ডেনমার্ক তালিকায় তৃতীয়। এরপর রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,নরওয়ে, জর্জিয়া, সুইডেন। বিশ্বের উঠতি অর্থনীতির মধ্যে চীন ৭৮তম অবস্থানে। সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে সোমালিয়া। ডুইং বিজনেস বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ অর্থনীতির সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে ডুইং বিজনেস ক্যাটাগরিসহ বেশ কিছু সূচকে পিছিয়ে পড়ছে, যা উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের সূচকগুলোতে অগ্রগতি অর্জনে তিনি সব পক্ষের একযোগে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ডুইং বিজনেসসহ অন্যান্য সূচকে অগ্রগতি অর্জনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই বলে জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের শাসন ব্যবস্থায় প্রচুর অপ্রয়োজনীয় আইন রয়েছে, যেগুলো বাদ দেয়া প্রয়োজন। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আইনসমূহের সংস্কারে আরও গতি আনার উপর জোর দেন। তিনি সরকার ও ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে আস্থা বাড়নোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ডুইং বিজনেস সূচকে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। ডুইং বিজনেসে সারাবিশ্বে এখন প্রতিযোগিতা চলছে। বাংলাদেশকে বুঝতে হবে, এটা ১০ বছর আগের দেশ না। তিনি বলেন, ভারতের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তারা কতটা উন্নতি করেছে। আমাদের সেভাবেই নীতিনির্ধারণ করতে হবে যাতে আমরা না পিছিয়ে এগুতে পারি।
Advertisement
এমইউএইচ/ওআর/এমএস