সরকারের নানা উদ্যোগের পরও চালের বাজার নিয়ে গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের অস্বস্তি কাটছেই না। মঙ্গলবার রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৪ টাকায়। তবে চিত্র আরও ভয়াবহ বলছে, খোদ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। তাদের তথ্য অনুযায়ী, নগরীতে গড়ে ৪৬ টাকায় মোট চাল বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। তবে সরু চালের দাম বাড়ার হার এর প্রায় দ্বিগুণ।
Advertisement
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছে। তবে চালের মজুদ কমে যাওয়া, নিয়মিত বাজার মনিটরিং না হওয়া, অতি বৃষ্টির পানিতে হাওরের ধান নষ্ট হওয়ায় চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষ।
রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারের ঘুরে দেখা গেছে, এখনও আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতাদের দাবি চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার কোনো প্রভাব পারেনি বাজারে।
এর আগে গত ২০ জুন চাল আমদানির উপর ১৮ শতাংশ শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা কমবে। কিন্তু ঘোষণার ১৪ দিন পার হলেও এর কোনো সুফল পায়নি সাধারণ মানুষ।
Advertisement
বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে ৬২ টাকায় বিভিন্ন ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৪ টাকা। স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৮ টাকায়। বিআর-২৮ ও লতা ৫০-৫২ টাকা এবং পাইজম ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিনিকেট ৫২-৫৫ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬২ টাকায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকা এবং সরু চাল ৫৫-৬০ টাকা। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মোটা চালের দাম প্রায় ৪৭ শতাংশ বেড়েছে।
চালের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে মুগদার মিতালী রাইচ এজেন্সির বিক্রেতা মো. সবুজ জানান, রমজানে যে দামে বিক্রি করেছি আজও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে কোনো চালের দাম কমেনি। সরকার শুল্ক হার কমিয়েছে। চাল আমদানি সহজ করেছে। কিন্তু এর কোনো ফল আমরা পাইনি। উল্টো শুনতেছি ভারত চাল রফতানিতে শুল্ক বাড়াবে।
এদিকে রাজধানীর পাইকারি বাজার বাদামতলীর চাল বিক্রেতা কামাল বলেন, সরকারি সুবিধা নিয়ে আমদানি করা চাল এখনও বাজারে আসেনি। তা বাজারে আসলে চালের দাম কমবে। তবে চালের দাম বেশি হলেও সরবরাহে ঘাটতি নেই বলছেন এ বিক্রেতা।
Advertisement
নির্মাণ শ্রমিক সোবহান বলেন, ৩২ টাকার চাল এখন ৪৪ টাকা। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন কাজ করি। যে টাকা আয় করি তার চাল কিনতেই তো চলে যায়। আর অন্য খরচ তো আছেই। চালের দাম বাড়লে বড়লোকের সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় আমাদের মত গরিবের। গরিব মানুষ খায়ই ভাত। গরিবের কথা কে ভাবে? চালের দাম যেভাবে বাড়ছে, ভাত খাওয়াও কমাইতে হইবো।
মতিঝিল বাজারে চাল কিনতে আসা সোরহাব নামে এক ক্রেতা বলেন, রোজার আগে ২৫ কেজি ওজনের যে চালের বস্তা কিনেছি ১২৫০ টাকা দিয়ে। এখন তার দাম নিচ্ছে ১৪০০ টাকা। প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৬ টাকা। ভাততো খেতেই হবে। তাই চালের দাম বাড়লেও না কিনলে চলবে না। শুনেছি সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ঈদের পর চালের দাম কমবে। কিন্তু দাম কমা ছাড়া উল্টো বেড়েছে।
এসআই/জেএইচ/এমএস