দেশজুড়ে

ঈদে জামা কিনমু তাই ভাংরি কুড়াই

আর ক’দিন পরই ঈদ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা প্রস্তুতি। নতুন জামা ছাড়া ঈদ যেন চিন্তাই করতে পারে না শিশুরা। তাই জামা কেনার এ প্রতিযোগিতায়  পিছিয়ে থাকতে চায় না তারা।তাইতো ভাংরি খুঁজে খুঁজে ব্যস্ত সময় পার করছে রংপুরের লিচু বাগান বস্তির শিশু মৌসুমি (১০), শরীফ (৮), লাবলী (১১) ও কেয়া (৭)। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয় ভাংরি কুড়ানোর জন্য। ভাংরি কুড়ানোর টাকায় তাদের ঈদের নতুন জামা কিনতে হবে বলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে ১ রমজান থেকে তাদের এই ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। নতুন জামার আশায় তাই নর্দমা থেকে ভাংরি সংগ্রহ করে মহাজনের কাছে বিক্রি করে যা আয় হয় তাই জমিয়ে রাখছে তারা। বৃহস্পতিবার স্টেশনের রেলগেট এলাকার রিকশা গ্যারেজের পেছনে গিয়ে দেখা মেলে চার শিশুর। সেখানে ময়লা আর্বজনা থেকে কাগজ, লোহা, বোতল, কাচের টুকরোসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করছিল তারা। এদেরই একজন লাবলী জানায়, তার বাবা নেই। মা আছে সেও অসুস্থ। বড় ভাই সংসারে ঘানি টানতে টানতে হাঁপিয়ে উঠেছে। ঈদে নতুন জামার জন্য ভাই ও মা তাকে ভাংরি কুড়াতে বলেছে। প্রতিদিন যা পায় তা বিক্রি করে মায়ের কাছে টাকা জমা রাখে নতুন জামা কিনবে বলে। শিশু মৌসুমীরও একই অবস্থা। সুযোগ হয়নি স্কুলে যাওয়ার। ছোটকাল থেকেই ভাংরি কুড়িয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করে। তার মা বেবী বেগমও চাপ দিয়েছেন বেশি বেশি ভাংরি কুড়ানোর জন্য। তাইতো খেয়ে না খেয়ে ড্রেন, ময়লা আবর্জনার স্তুপ থেকে  ভাংরি খুঁজতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কত টাকা দিনে আয় হয়? জানতে চাইলে শরীফ জানায়, যা কুড়াই তা শহীদ মহাজনের কাছে দেই। ৩০/৪০ টাকা হয় আর কি। তবে এ পেশায় বড়রাও ঝুঁকে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে তার।  অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়েই শরীফ জানায়, তাদের (বড়) সঙ্গে কুলে উঠতে না পেরে আয় একটু কমই হচ্ছে। এই দলের অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য কেয়া। একইভাবে ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাংরি কুঁড়ানোর কাছে ব্যস্ত সে। ভাংরি দিয়ে করবা? এমন প্রশ্ন করলে সোজা উত্তর, ঈদে জামা কিনমু তাই ভাংড়ি কুড়াই।তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাংরি কুড়ানোর কাজে সারাদিন বিভিন্ন ময়লা আর্বজনা ও ভাগাড়ে পড়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বস্তা ভর্তি হলেই তারা মহাজনের কছে চলে যায়।এই শিশুরা জানায়, নর্দমায় নামার পর অনেক সময় তাদের পা, হাত কেটে যায়। কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে আবারও কাজে নামে। অনেক সময় কারণ ছাড়াই তাদের চোর সন্দেহে মারপিটও করা হয়। দলনেতা লাবলী বলে, অনেক মাইনষ্যে (মানুষ) আছে ভাংড়ি কুরবার (কুড়ানোর) গেইলে ধমকায় । চোর মনে করি মারে। ভয়ে দৌড়ি পালাই। মারলেও কিছু কই না, সহ্য করি। রবিউল ইসলাম দুখু নামে ওই এলাকার এক যুবক জানান, রমজানের শুরু থেকে তার বন্ধুদের মাঝে ঈদের কেনাকাটার ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। তাদের একেকজনের ঈদের বাজেট ৫ থেকে ১০ হাজার টাকারও বেশি। অথচ এই সমাজে একটি অংশ রয়েছে যাদের কাছে ঈদ আনন্দ কেবল বেচেঁ থাকার লড়াই, দুই বেলা খাবারের সংগ্রাম। অথচ সবাই চাইলে এই ঈদে অন্তত কিছু সংখ্যক পথ শিশুদের আনন্দ দেয়া যায়। তাদের মুখে হাসি ফোটানো যায়।এসএস/পিআর

Advertisement