দেশজুড়ে

ছাত্রদল ক্যাডার পরিচয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে হুমকি দিলেন কলেজ শিক্ষক

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক ক্যাডার পরিচয় দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এ কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে।

Advertisement

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.টি.এম জিল্লুর রহমানকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়। আর অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম নজরুল ইসলাম বাচ্চু। তিনি উপজেলার চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

ওই কথোপকথনের রেকর্ডে নজরুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার কপাল ও ভাগ্য ভালো, আপনি আমার কলেজে আসছেন, আমার খোঁজ করেছেন, আবার হুমকি দিয়ে গেছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডার। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার, আমার নাম নজরুল ইসলাম বাচ্চু। আমি কিন্তু রাজপথের লড়াকু সৈনিক। এরশাদ আন্দোলনে আমি অগ্রণী ভূমিকার একজন, মানে সেই রকম ক্যাডার ছিলাম আমি।’

অপর প্রান্ত থেকে শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান ‘আচ্ছা হোক তবে...’ বলতেই নজরুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘ওই ব্যাটা... আপনার বগুড়া বাড়ি, সেটা নিয়ে আপনি থাকেন। আপনি জানেন, তারেক রহমানের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? আপনি আমার কলেজে এসে হুমকি দিয়ে গেছেন। আমি কলেজে থাকলে আপনার চেহারা ফাটফাট করে দিতাম। যাবো নাকি আপনার অফিসে?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা এ.টি.এম জিল্লুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজে ল্যাব পরিদর্শনে যাই। ওইদিন কলেজে গেলে শিক্ষক নজরুল ইসলামের সহকর্মীরা তার বিরুদ্ধে বেশিরভাগ সময়ে কলেজে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ তুলে ধরেন। এমন শিক্ষককে সামনাসামনি দেখার ইচ্ছাপোষণ করেছিলাম। তবে ওইদিন তিনি কলেজে অনুপস্থিত থাকায় দেখা করার সুযোগ হয়নি। এরই মধ্যে ২ জানুয়ারি হঠাৎ তিনি (নজরুল ইসলাম) আমাকে কল করে হুমকি দেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, হুমকি দেওয়ার সময় বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠছিলেন নজরুল। তাই দ্রুতই কল কেটে দিয়েছি। এ ঘটনায় আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। পুরো ঘটনা লিখিত আকারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে শিক্ষক নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অপরাধ তিনিও (জিল্লুর রহমান) করেছেন। কলেজে গিয়ে তিনি আমার সহকর্মীদের কাছে আমার নামে উল্টোপাল্টা কথা বলে এসেছেন। ওইসব শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। তাই আমিও কল করে হুমকি দিয়েছি।

Advertisement

ছাত্রদলের ক্যাডার ও তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সত্যি যে, আমি ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। শুধুমাত্র দলীয় মতাদর্শের কারণে ১৬ বছর অত্যাচারিত হয়েছি। অনেক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত ছিলাম। যেহেতু তারেক রহমান আমার নেতা, তাই স্বাভাবিকভাবেই তার নাম ব্যবহার করেছি। এতে দোষের কিছু নেই।

সার্বিক বিষয়ে জানতে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চৌরাট শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলিমুজ্জামানের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফেসবুকে কল রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো ঘটনা জানতে খোঁজ নিয়েছি। এ ঘটনায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেবেন। এরপর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরমান হোসেন রুমন/জেডএইচ/জিকেএস