দেশজুড়ে

পঙ্গু বাবার স্বপ্ন পূরণ করা হলো না টিটুর

অনেক স্বপ্ন নিয়ে জমি বিক্রি ও ঋণের টাকায় ছেলে টিটুকে ইতালি পাঠান পঙ্গু চা বিক্রেতা বাবা হাসান হাওলাদার। মা কুলসুম বেগমও একটু ভালো থাকার আসায় স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। অকালে চলে যেতে হলো টিটু হাওলাদারকে। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে রাজৈরের টিটুও একজন।

Advertisement

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের হাসান হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। অসুস্থতায় একটি হাত অকেজো হয়ে গেছে। সংসারের অভাব দূর করতে বাড়ির কাছেই বাজারে চা বিক্রি করেন তিনি। তাতেও সংসারের অভাব দূর হয় না। এজন্য স্ত্রী কুলসুম বেগম স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠান হলে রান্নার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ছেলে টিটু হাওলাদার কাজ করতেন একটি মোবাইল মেরামতের দোকানে। এভাবে তিনজনের আয়ে কোনোভাবে চলে যাচ্ছিল সংসার।

তবে ছেলে টিটুর স্বপ্ন ছিল ইতালি যাবেন। সংসারের অভাব ঘোচাবেন। ছেলের স্বপ্নপূরণে হাসান হাওলাদার কিছু জমি বিক্রি করেন। এরপর ঋণ নিয়ে দালালের হাতে তুলে দেন ১৪ লাখ টাকা। সেই টাকা পরিশোধের পর গত ১ জানুয়ারি বাড়ি থেকে বের হন টিটু হাওলাদার। লিবিয়ায় গিয়ে অবস্থান করেন। সেখানে ‘গেম ঘর’ (বন্দিশালা) থেকে সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার জন্য নৌকায় তোলা হয়। সেই নৌকা ডুবে যায়। এতে প্রাণ হারান ২৩ জন। তাদেরই একজন টিটু হাওলাদার।

আরও পড়ুন:

Advertisement

ভূমধ্যসাগরে নিহত ২৩ জনের ১০ জনই মাদারীপুরের

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে মৃত্যুর সংবাদ টিটুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শুরু হয় শোকের মাতম। ছেলেকে হারানোর শোক কিছুতেই মানতে পারছেন না অসুস্থ বাবা-মা। মা কুলসুম বেগম কিছুক্ষণ পরপর জ্ঞান হারান।

নিহত টিটু হাওলাদারের মা কুলসুম বেগম কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘আমার তো সব শেষ হয়ে গেলো। এই মৃত্যু আমরা কীভাবে মেনে নেবো? ছেলে আমাদের ভালো রাখবে, এই আশায় ইতালি যেতে চেয়েছিল। এখন সেই ছেলে আমাদের চিরতরে দুঃখের মধ্যে রেখে গেলো। ছেলেকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারবো কি না জানি না। সরকারের কাছে দাবি, ছেলের লাশটা দেশে আনা হোক।’

বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, ‘অনেক টাকা লোন আছে। এই টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো? আমি অসুস্থ, কীভাবেই বা সংসার চালাবো? এক নিমিষেই আমার সব শেষ হয়ে গেলো।’

ওই বাড়িতে কথা হয় প্রতিবেশী জামাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টিটু মারা যাওয়ার ঘটনা আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না। ওদের অভাবের সংসারে টিটুই ছিল ভরসা। সেখানে টিটুর এই মৃত্যু খুবই দুঃখজনক।’

Advertisement

এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ খান বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/এমএস