শ্রীলঙ্কা দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার ইঙ্গিত হিসেবে কিছু যানবাহনের আমদানির নিষেধাজ্ঞা শিথিল করছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাস, ট্রাক এবং বহুমুখী যানবাহন (ইউটিলিটি ভেহিকল) আমদানি চালু হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল (এসইউভি) এবং টুকটুক (তিন চাকার রিকশা) আমদানির নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। এটিও পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে লঙ্কান সরকার।
Advertisement
তবে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে গাড়ির সংকট, মুদ্রার দুর্বল মান ও উচ্চ শুল্কের কারণে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— দেশটিতে নতুন গাড়ি কেনার সামর্থ্য কতজনের থাকবে?
গাড়ির দাম তিনগুণঅর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাডভোকাটার চেয়ারম্যান মুর্তাজা জাফিরজি মনে করেন, গাড়ি আমদানির অনুমতি অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিল। তার মতে, গাড়ি আমদানি চালু হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং গাড়ি ফাইন্যান্সিং, ডিলারশিপ, সার্ভিসিংসহ সংশ্লিষ্ট খাতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
তবে শ্রীলঙ্কার তথ্যমন্ত্রী নালিন্দা জয়তিসা জানিয়েছেন, সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যাতে হঠাৎ আমদানি বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে না যায়।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় নতুন ও পুরোনো আমদানি করা গাড়ির ওপর ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ইঞ্জিনের আকারের ওপর নির্ভর করে। এর সঙ্গে ১৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যোগ হওয়ায় আমদানি করা গাড়ির দাম আরও বেড়ে যায়।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার মুদ্রার মানের ক্রমাগত অবনমন হওয়ায় গাড়ির দাম আগের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি হয়ে গেছে।
কিনতে পারবে কতজন?নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা শ্রীলঙ্কার গাড়ি ক্রেতাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, করের ভার ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন গাড়ি কেনা তাদের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে।
Advertisement
কলম্বোর এক গাড়ি আমদানিকারক আরোশা রড্রিগো বলেন, তার প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার আগে মাসে প্রায় ১০০ গাড়ি আমদানি করতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে একটিও আনতে পারেননি।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও অধিকাংশ মানুষ হয়তো গাড়ি কিনতে পারবে না। কারণ কর বৃদ্ধি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে দাম অনেক বেশি হয়ে গেছে।
ক্যান্ডির সফটওয়্যার প্রকৌশলী শশীকুমার বলেন, শ্রীলঙ্কার দুর্বল গণপরিবহন ব্যবস্থা বিবেচনায় ব্যক্তিগত গাড়ি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার হয় গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করুক, নয়তো ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক।
শিক্ষক আর. ইয়াসোধা জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু নতুন কর কাঠামোতে একটি মাঝারি আকারের গাড়ির দাম ২৫ লাখ রুপি থেকে বেড়ে ৫০ লাখ রুপি হবে, যা তাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ফলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে কিছুটা গতি আসতে পারে। তবে উচ্চ শুল্ক, দুর্বল মুদ্রা ও সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য নতুন গাড়ি কেনা এখনো কঠিন হয়েই থাকবে।
সূত্র: বিবিসিকেএএ/