ধর্ম

আসরের পর ঘুমানো কি নিষিদ্ধ?

কিছু সাহাবি ও তাবেঈ আসরের পর ঘুমানো অপছন্দনীয় মনে করতেন বলে বর্ণিত রয়েছে। ইবনে আবি শাইবা তার মুসান্নাফ গ্রন্থে মাকহুল (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আসরের পর ঘুমানো অপছন্দ করতেন এবং বলতেন, আসরের পরে ঘুমানোর কারণে অন্তরে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা সৃষ্টি হতে পারে।

Advertisement

আসরের নামাজের কিছুক্ষণ পরই মাগরিবের সময় হয় এবং দ্রুত শেষও হয়ে যায়। আসরের পর ঘুমালে মাগরিবের নামাজ কাজা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণেও আসরের পর ঘুমানো অনুচিত। আসরের পর ঘুমানোর ব্যাপারে একটি হাদিস উল্লেখ করা হয় যা আবু ইয়ালা ও দায়লামী বর্ণনা করেছেন; হাদিসটি হলো, ‘যে ব্যক্তি আসরের পর ঘুমায় এবং তার বুদ্ধি-শুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, সে যেন নিজেকেই দোষ দেয়।’ এ হাদিসটিকে হাদিসবিশারদরা অত্যন্ত দুর্বল ও দলিল হিসেবে উপস্থাপনের অযোগ্য বলেছেন। তাই এটি নবিজির (সা.) বাণী হিসেবে প্রচার করা ঠিক নয়।

ঘুম আল্লাহ তাআলার দান ও বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা বলেন, তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে রাত ও দিনে তোমাদের ঘুম এবং তোমাদের তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন আছে সেই সকল লোকের জন্য, যারা কথা শোনে। (সুরা রোম: ২৩)

ঘুমের মূল সময় হলো রাত। সারাদিনের কাজ ও পরিশ্রমের পর রাতের ঘুম আমাদের ক্লান্তি দূর করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম বা ক্লান্তি দূরকারী, রাতকে করেছি আবরণ। (সুরা নাবা: ৯-১০)

Advertisement

সাইয়েদ কুতুব তার তাফসিরগ্রন্থ ‘ফি জিলালিল কুরআনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, কোরআনে উল্লিখিত এই বিশ্রাম অর্থাৎ শারীরিক-মানসিক সব কাজ ও পরিশ্রম থেকে সাময়িক বিচ্ছিন্নতা যে কোনো জীবের একটি অপরিহার্য চাহিদা। এটি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, যা একমাত্র তিনিই দিতে পারেন।

একজন মুসলমানের জীবনযাপন সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যকর হওয়া উচিত। জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন অর্থাৎ কাজ, পরিশ্রম, ঘুম, খাবার সব কিছুই পরিমিত পরিমাণ গ্রহণ করা উচিত। কোনো ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা করা বা ছাড়াছাড়ি করা উচিত নয়। বেশি ঘুম যেমন ক্ষতিকর, অতিরিক্ত কম ঘুমও ক্ষতিকর।

ইমাম ইবনুল কাইয়িম তার ‘তিব্বুন-নববী’ গ্রন্থে বলেন, যদি কেউ নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম ও জাগরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে, তবে সে দেখবে যে, তার ঘুম ছিল পরিমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি রাতের প্রথম অংশে ঘুমাতেন এবং দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম অংশে জাগ্রত হতেন, তারপর মিসওয়াক করতেন, ওজু করতেন এবং নামাজ আদায় করতেন। এতে তাঁর শরীর ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজনও পূর্ণ হতো এবং একইসঙ্গে ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও সওয়াবও লাভ হতো। নবিজি (সা.) কখনো অতিরিক্ত ঘুমাতেন না। নিজের শরীরের জন্য যতটুকু ঘুম প্রয়োজন, ততটুকুই ঘুমাতেন।

ওএফএফ/এএসএম

Advertisement