সাহিত্য

বিরহের তিনটি কবিতা

নিজেকে দুঃখী ভাবতে ভালো লাগে

Advertisement

কখনো কখনো কোনো কারণ ছাড়াইনিজেকে দুঃখী ভাবতে ভালো লাগে।

ভীষণ ভিড়ের মধ্যেও নিজেকে একা করে ফেলি অনায়াসে।

একটা নদীনদীর পাড়। সেখানে ধূসর ঘাসে বসেসূর্যাস্ত দেখতে দেখতে একাকিত্বের তালিম নিইদূরে উড়ে যাওয়া পাখির মলিন পালক থেকে।

Advertisement

তারপরচোখ বন্ধ করে শুধু তোমার কথা ভাবি।যা হবে না কোনোদিন সেসব দৃশ্য আঁকিবুকের আনাড়ি ভূমিতে।ভাবতে ভালো লাগে—তোমার উত্তাল বুকের কাছাকাছিআমাকে আপন করে নেবে একদিন।

ঠিক তখনইনদীভাঙনের শব্দেআমার চৈতন্য ফিরে আসে স্বৈরাচারের বুলেটের বেগে।

আমি বুঝতে পারিআমি মূলত দুঃখীই, আমি মূলত একাই।

****

Advertisement

কেউ নেই অপেক্ষায়

আমার জন্য কেউই অপেক্ষা করেনি কখনো।

একটা কচুরি ফুলবড় গাছ বরাবর নদীতে ভাসতে দেখেবাড়িতে এসেছিলাম মাকে বলবো বলে ফিরে এসে দেখি, সেই কচুরি কোথাও নেই আরআমার দৃষ্টির ব্যর্থ সীমানায়।

প্রাপ্তবয়স্ক সন্ধ্যায় একবার যে মেয়ে কাগজের একশ টুকরায় লিখেছিল ‘ভালোবাসি তোমাকে, তোমাকেই!’একদিন সেও চলে গেছে সহজ পথে।আমার অপেক্ষায়, থাকেনি হায়!

আমার জন্য কেউই অপেক্ষা করেনি কখনো।

হাসপাতালের বিছানায় আব্বাকে খাবার পৌঁছে ফিরছি যখন বাসায়, কিছুদূর যেতে না যেতেইমায়ের ফোন—কী বলল, বুঝিনি কিছুই!ফিরে গিয়ে দেখি, মা কাঁদছেন; আব্বা চলে গেছেন।

আমি আসা পর্যন্ত কেউই করলো নাআরেকটু অপেক্ষা।

****

একা হয়ে যাও

সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বরং একা হয়ে যাও।

ভুলে যাওকেউ একজন তোমাকে ভালোবাসতো কোনো এককালে।তার ঘামে ভেজা ওড়নার মায়া ছিঁড়ে ফেলেহাওয়ায় মিলিয়ে দাও চোখ বন্ধ করে।

সবকিছু ভুলে বরং নিঃসঙ্গ হও, নক্ষত্র ও আমার মতো।

জেনে রেখোকেউই আসলে থাকে না আপন আজীবন।চলতে চলতে নদীও বাঁক নেয়,শাখা-উপশাখা কত কী হয়!পাড় ভেঙে সবুজ ঘাসের নির্মম স্বপ্নভঙ্গ।

এসব কথা বরং ভুলেই যাও।

ভুলে যাওকেউ একজন তোমার বিষণ্ণতার কালেগালে চুমো খেতো সিনেমাটিক পন্থায়।গালের সে দাগ মুছে ফেলো এখনই।

অতি সহজেই সে দাগ মুছে যাবে জানিকিন্তু মনে লেগে থাকা স্মৃতির গাঢ় দাগ?

আসলে মানুষ চাইলেওকোনোদিনই পারে না পুরোপুরি একা হতে।জমজমাট নিঃসঙ্গতার আড়ালেওসঙ্গ দেয় বিশেষ কেউ।

এসইউ/জেআইএম