ক্যাম্পাস

দেশে প্রথমবারের মতো মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ব্রুসেলোসিস শনাক্ত

দেশে প্রথমবারের মতো মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ব্রুসেলোসিস শনাক্ত

ব্রুসেলোসিস হলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া একটি ঘাতক ব্যাধি, যা গৃহপালিত পশু, বন্যপ্রাণী এবং সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। এটি খামারিদের জন্য ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনে। একইসঙ্গে এটি একটি জুনোটিক রোগ হওয়ায় গবাদিপশু থেকে সহজেই মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। গবাদিপশুর ক্ষেত্রে দুধ উৎপাদন কমে যাওয়া, গর্ভপাত এবং উৎপাদনশীলতা ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়াসহ নানান সমস্যা দেখা দেয়।

Advertisement

তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং তার পিএইচডি গবেষণারত শিক্ষার্থী কর্নেল (অব.) এসএম আজিজুল করিম হুসাইনী দাবি করেছেন, দেশে প্রথমবারের মতো মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্রুসেলোসিস রোগের ঝুঁকি নির্ধারণ, রোগ শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে কার্যকর তথ্য বের করে আনা সম্ভব হয়েছে।

এ-সংক্রান্ত গবেষণাটি এশিয়ান জার্নাল অব অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা সাময়িকীটি একটি স্কোপাস ইনডেক্সভুক্ত জার্নাল এবং এর ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ১.৬।

গবেষণায় প্রধান গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান। কো-সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জার্মানির ফ্রেডেরিখ লোফলর ইনস্টিটিউটের ড. হেনরিখ নইবার। গবেষণায় প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদান করেছে সৌদি আরবের কিং ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‌‘এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে খামারিরা ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন। আমরা মেশিন লার্নিংয়ের পাঁচটি অ্যালগরিদম প্রয়োগ করে সফলভাবে ব্রুসেলোসিস রোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো নির্ণয় করতে পেরেছি। এর মধ্যে এমএলপি, ডিপ লার্নিং ফোরজে, আডাবুস্ট এমআই এবং জে৪৮ ট্রি সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম শুধু পশুস্বাস্থ্য নয়; মানুষের হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ইত্যাদি নির্ণয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও ধর্মীয় অনুভূতির কারণে ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত পশু নিধনের পদ্ধতি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। বরং যেসব পশুর রপ্তানির অনুপাত বেশি ও যেগুলোর দাম বেশি, সেগুলোর ক্ষেত্রে নিরীক্ষা করে চিকিৎসা দেওয়া যায়।’

গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রুসেলোসিস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার অন্তত ১২টি প্রজাতির মধ্যে বি অ্যাবোরটাস, বি সুইস, বি মেলিটেনসিস ও বি ক্যানিস সবচেয়ে ক্ষতিকর।

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান আরও জানান, বর্তমানে ব্যবহৃত বি অ্যাবোরটাস (এস-১৯) এবং আরবি৫১ লাইভ ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে ‘মৃত ভ্যাকসিন’ নিরাপদ এবং কার্যকর বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্রুসেলোসিস প্রতিরোধে একটি যুগান্তকারী টিকা উদ্ভাবনের সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

পিএইচডি গবেষক কর্নেল (অব.) এসএম আজিজুল করিম হুসাইনী জানান, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই গবেষণায় মেশিন লার্নিং পদ্ধতির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ সংক্রমণের পদ্ধতি ও প্রতিরোধের উপায় নির্ধারণ করা গেছে। চিকিৎসায় অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, স্ট্রেপটোমাইসিন ও বেনজিল পেনিসিলিন একত্রে প্রয়োগে আশানুরূপ ফলাফল মিলেছে।

তিনি বলেন, আমরা সঠিক নির্দেশনা পেয়েছি এবং তা অনুসরণ করে কাজ করেছি। এতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া গেছে। এই সাফল্য দেশ ও জাতির জন্য একটি গর্বের বিষয় হয়ে থাকবে।

আসিফ ইকবাল/এসআর/এএসএম