ফিচার

বিশ্বের আলোচিত ৫ রহস্যময় ছবি

রংতুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে আঁকা প্রাণবন্ত ছবি তুলে ধরাই চিত্রশিল্পীদের কাজ। দ্য স্কুল অব অ্যাথেন্স, দ্য লাস্ট সাপার, গের্নিকা, উইসলার’স মাদার চিত্রশিল্পীদের আঁকা অসংখ্য ছবির মধ্যে অন্যতম। জনপ্রিয় এই ছবিগুলো যে শুধু নিজ দেশেই জনপ্রিয় এমনটি নয়, প্রশংসা কুড়িয়েছে সারাবিশ্বে। চলুন জেনে আসা যাক এমন আরও কিছু ছবি সম্পর্কে।

Advertisement

দ্য স্টারি নাইটভিনসেন্ট ভ্যান গগ গুণী চিত্রকরদের একজন। তার বিখ্যাত চিত্রকর্ম দ্য স্টারি নাইট পেয়েছে অগণিত মানুষের ভালোবাসা। অনেকের মতে, এটি তার জীবনের সেরা কাজ। ১৮৮৯ সালে জুন মাসে এ ছবিটি আঁকেন তিনি। মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে নিজের কান নিজেই কেটে যখন হাসপাতালে ভর্তি হন তখন জানালার বাইরের রাতের দৃশ্যটি দেখে তিনি এই ছবিটি এঁকেছিলেন। ক্যানভাসের উপর তেল রঙে আঁকা ছবিটি বর্তমানে রয়েছে নিউ ইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে।

আরও পড়ুন: ৮২ বছরের জীবনে কোনো নারীকেই দেখেননি তিনি

গার্ল উইথ আ পার্ল ইয়ারিংডাচ চিত্রশিল্পী ইয়োহানেস ভারমিয়ারের কীর্তি আশ্চর্যময়ী এ বালিকার ছবিকে বলা হয়ে থাকে ‘মোনালিসা অব নর্থ’। ১৬৬৫ সালে ক্যানভাসের উপর তেলরঙে ছবিটি আঁকেন ভার্মিয়ার। মেয়েটির চাহনি, কিছু বলতে চাওয়ার অভিব্যক্তি, নীলরঙা স্কার্ফ আর বেশ বড় ওই মুক্তার কানের দুল একে একে অনেকগুলো গল্প বলে যায়। কানের ওই দুলটি মুক্তার না হয়ে পালিশ করা টিনের হলে ছবিটি ভিন্নমাত্রা পেত বলেই মনে করেন অনেকে। বর্তমানে ছবিটি সংরক্ষিত আছে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরের মাওরিটশাওস জাদুঘরে।

Advertisement

দ্য ফ্লাওয়ার ক্যারিয়ারদ্য ফ্লাওয়ার ক্যারিয়ার মেক্সিকান চিত্রশিল্পী দিয়েগো রিভেরার সেরা ছবিগুলোর একটি। ছবিটি বেশ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সৌন্দর্য উপভোগ করার ফুসরত নেই শ্রমজীবীদের। ছবিটির সাবজেক্ট, যে ফুলের ঝুড়িটি কাঁধে করে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন, তার সে সুযোগ কোথায়? আমরা ধরে নিতেই পারি, পেছনের সাহায্যকারী নারীটি সাবজেক্টের স্ত্রী এবং কালো বর্ণ ও শারীরিক গঠন বলে দেয় যে তারা মেক্সিকান। ছবিটিতে মেক্সিকোর সামাজিক রীতিনীতির একটি দিক ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। শারীরিক আকার আর কাজের সামর্থ্যের প্রশ্নে চিত্রশিল্পী আমাদের ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা সচেতন পাঠকরা বুঝতে পারবেন।

আরও পড়ুন: আধুনিকতার ছোঁয়ায় কদরহীন কুপি বাতি ও হারিকেন

আর্নোফিনি পোর্ট্রেইটনর্দার্ন রেঁনেসার একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি য্যান ভ্যান আইক। তার সেরা কাজ আর্নোফিনি পোর্ট্রেইট। তিনি এঁকেছিলেন ১৪৩৪ সালে, বর্তমানে তা সংরক্ষিত আছে লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে। অনেকে মনে করেন, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এবং গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকর্ম। চিত্রে নারীটি গর্ভবতী। ঘরের আসবাবপত্র, সাজসজ্জা, পোশাক বুঝিয়ে দিচ্ছে ছবিটি ধনী পরিবারের। উপরে ঝুলতে থাকা ঝাড়বাতিতে একটি মাত্র মোমবাতি জ্বলছে, যা ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। আবার ভ্যান আইক ঝাড়বাতির ঠিক নিচে আঁকিয়ের স্বাক্ষরের ঢঙে জানান দিয়েছেন নিজের উপস্থিতির কথা। তিনি লিখেছেন, ‘জোহানেস ভ্যান আইক এখানে উপস্থিত ১৪৩৪!’ কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পরিবারটির সম্ভ্রান্তের প্রতীক আয়নাটি। আয়নাটিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দুজন অতিথি এসেছেন বাড়ির দরজায়, বাড়ির কর্তা হয়তো তাই হাত উঁচু করে অভিবাদন জানাচ্ছেন ওদের। ছবিটি আরও বেশি আগ্রহ উদ্দীপক হয়ে ওঠে যখন দেখা যায় আয়নায় চারপাশে বাড়তি অংশগুলোতে আরও দশটি মিনিয়েচার এঁকেছেন তিনি।

মোনালিসামোনালিসা নামের এই চিত্রকর্মটির নাম শোনেননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এই ছবিটির চিত্রশিল্পী ইতালীয় রেনেসাঁর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। ধারণা করা হয় ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সালের মধ্যে তিনি এ ছবিটি এঁকেছিলেন। কিন্তু কে এই মোনালিসা? অনেক শিল্প গবেষক পোর্ট্রেটের এই বিখ্যাত নারীকে ফ্লোরেন্টাইনের বণিক ফ্রান্সিসকো দ্য গিওকন্ডোর স্ত্রী লিসা গেরাদিনি বলে শনাক্ত করেছেন। আবার প্রায় লোমহীন মুখটায় অনেকে দাড়ি লাগিয়ে স্বয়ং লিওনার্দোকেই আবিষ্কার করে ফেলেন। অর্থাৎ তারা দাবি করেন, এ চরিত্রটি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির নারীসত্ত্বা! ১৯১১ সালে ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়ার পর থেকেই রাতারাতি বিখ্যাত বনে যায় মোনালিসা ছবিটি।

Advertisement

কেএসকে/এএসএম