ফিচার

ঐতিহ্যবাহী বাহন গরুর গাড়ি বিলুপ্তির পথে

আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে/ ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত্তুর ধু সানাই বাজিয়ে/ যাবো তোমায় শ্বশুরবাড়ি নিয়ে, বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় গানটি একসময় ছিল মানুষের মুখে মুখে। কিছুকাল আগেও গানের লাইন তিনটি বাস্তব ছিল। বর্তমানে এমন দৃশ্য বিরল। বউকে গরুর গাড়িতে নয়, নেওয়া হয় ইঞ্জিন চালিত গাড়িতে।

Advertisement

এক সময় গ্রামবাংলায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল গরুর গাড়ি। ধান বোঝাই করা কিংবা দূর গ্রামে যেতে এই গাড়ির বিকল্প ছিল না। ইঞ্জিন চালিত যানবাহন উদ্ভাবনের পর মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, সেই সঙ্গে কমতে শুরু করে বহুল প্রচলিত গরুর গাড়ি।

দুই চাকাবিশিষ্ট এই যান গরু বা বলদ টেনে নিয়ে যায়। আদিকালে খাজনা প্রেরণ কিংবা উপহার প্রেরণের জনপ্রিয় বাহন ছিল এই গরুর গাড়ি। মালপত্র পরিবহনেও রয়েছে এর ভূমিকা। গরুর গাড়ির জনপ্রিয়তায় রচিত হয়েছে অসংখ্য গান। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা আস্তে বোলাও গাড়ি/ আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়ালসহ জনপ্রিয় আরও অনেক গান।

আরও পড়ুন: মাটির ঘর শুধুই পূর্বপুরুষের স্মৃতি

Advertisement

নব্যপ্রস্তর যুগ থেকেই যানটির ব্যবহার করে আসছে মানুষ। সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন শুরু হয় খ্রিস্টের জন্মের ১৬০০ থেকে ১৫০০ বছর আগে। ধীরে ধীরে এই গাড়ির প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে।

প্রত্যন্ত কাদামাটির অঞ্চলে মাঝেমধ্যে গরুর গাড়ি দেখা গেলেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। শহরের ছেলেমেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে মফস্বলের ছেলেমেয়েরাও অনেকে গরুর গাড়ির সঙ্গে পরিচিত নয়। জাদুঘর এবং নব্বই দশকের চলচ্চিত্রে গরুর গাড়ি স্মৃতি হয়ে রবে যুগ যুগ ধরে।

কয়েক বছর আগেও গ্রামাঞ্চলে বিয়ে উপলক্ষে গরুর গাড়ির চাহিদা ছিল। সে সময় যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল, তাদের ছিল আলাদা সম্মান। বর্তমানে মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই তেমন চোখে পড়ে না। মানুষ মালামাল বহনে এখন ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। সেই সঙ্গে মানুষের যাতায়াতের জন্য আছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, অটোরিকশা।

আরও পড়ুন: লেখাপড়ার ফাঁকে জুসবার দিয়ে সাবলম্বী ফাহাদ

Advertisement

গরুর গাড়ি কমলেও এটি ছিল পরিবেশবান্ধব। ছিল না জ্বালানি তেলের প্রয়োজন। কালো ধোঁয়ায় হতো না মানবদেহের ক্ষতি। ধীরগতির হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও ছিল কম। অনেকে নিজস্ব গরু দিয়ে চালাতেন এই গাড়ি। ফলে যাতায়াতের খরচও ছিল না তেমন।গরুর গাড়ির চালককে বলা হতো গাড়োয়ান। যেসব গরুর গাড়ি যাতায়াতের জন্য ব্যবহার হতো তার উপরে থাকত চাল। যাকে বলা হতো ছই।

যুগের পরিবর্তনে এই গাড়ির প্রচলন কমে গেলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো দেখা যায় গরুর গাড়ি। অনেকে মাঠ থেকে ফসল বাড়িতে আনার জন্য এই গাড়ি ব্যবহার করেন। তাতে কৃষকের বাড়তি খরচ বাঁচে অনেকখানি।

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী

কেএসকে/এএসএম