খেলাধুলা

বিশ্বকাপে সেরা পাঁচে থাকতে চান রুবেল

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচের কথা নিশ্চয় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে থাকার কথা। জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডকে রুবেলে হোসেনের সরাসরি বোল্ড করার দৃশ্যও এখনও চোখে ভাসার কথা সবার। রুবেলের ওই এক ওভারেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের।

Advertisement

এর আগে ঘরের মাঠে ২০১১ সালের বিশ্বকাপও খেলেছিলেন রুবেল হোসেন। বাংলাদেশ দলে সেরকম কোনো গতির বোলার নেই। রুবেল হোসেনই একমাত্র সবেধন নীলমণি। এক্সপ্রেস বোলার হিসেবে তারই কিছুটা সুখ্যাতি রয়েছে।

ইংল্যান্ডে এবার নিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন রুবেল হোসেন। সিনিয়র হিসেবে এ কারণে তার দায়িত্বও বেশি। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার একদিন পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রুবেল হোসেন জানিয়ে দিলেন, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপটাকে আরও বেশি স্মরণীয় করে রাখতে চান তিনি। এ জন্য সেখানে কি করতে হবে, তা ভালোভাবেই জানেন তারা এবং সেভাবেই নিজেকে উজাড় করে দেয়ার চেষ্টা করবেন এই পেসার।

দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য হিসেবে বিশ্বকাপে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে রুবেল হোসেন বলেন, ‘দায়িত্ব তো অবশ্যই অনেক থাকবে। আমি যদি আলহামদুলিল্লাহ সুস্থভাবে যেতে পারি, তাহলে এটি হবে আমার তৃতীয় বিশ্বকাপ। সুতরাং অবশ্যই অভিজ্ঞতা বেশি থাকবে এবং আছে। আমি চেষ্টা করবো যেন এর আগে যে দুটি বিশ্বকাপ খেলেছি এবং বিগত ভালো ম্যাচগুলো আছে সেগুলো স্মরণ করে ভালো কিছু করার এবং ভালো খেলার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।

Advertisement

ইংল্যান্ডের কন্ডিশন তো বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন। সেখানকার কন্ডিশন রুবেলদের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে আসলে আমরা অনেক খেলেছি। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি যে, ওখানকার কন্ডিশনে আমাদের কি করতে হবে, বিশেষ করে বোলারদের। কারণ ঐ ধরণের কন্ডিশনে... কিছু কিছু উইকেট থাকে যেখানে বোলারদের হেল্প থাকে, আবার কিছু উইকেট ব্যাটিং সহায়ক থাকে। আসলে আমাদের সেটি মানিয়ে নিতে হবে।’

নিজেদেরকে প্রস্তুত করে নেয়ার বড় সুযোগ আছে রুবেলদের। সেটাইকেই তুলে ধরলেন তিনি, ‘ওখানে আমরা অনেক প্রস্তুতির সুযোগ পাবো আর এটি অনেক লম্বা একটি সফর, আমরা সবাই জানি। ভালো স্মৃতিগুলো অবশ্যই মনে থাকবে। অবশ্যই ভালো একটি স্পেল করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। যখনই হোক আমি বোলিংয়ে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবো।’

বিশ্বকাপ নিয়ে স্পেশাল কি কি পরিকল্পনা সাজিয়েছেন রুবেল? তখনই জানালেন, এই বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চান। রুবেল বলেন, ‘মানুষের জীবনে ভালো এবং খারাপ সময় থাকে। তবে আলহামদুলিল্লাহ এই বিশ্বকাপটি যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে সেটাই আমার চাওয়া। এটাই আরকি, আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো যেন বিশ্বকাপে যখন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবো তখন আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে। ঐ ম্যাচটিতে যেন আমি ভালো বোলিং করতে পারি, দলের জন্য যেন ভালো কিছু করতে পারি। দলের প্রয়োজনে উইকেট বের করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো আমি।’

তাসকিনের না থাকাটা ব্যথার সৃষ্টি করেছে রুবেলের মনে। তাসকিনকে ভালো চেলে উল্লেখ করে তিনি জানালেন, বিশ্বকাপের দলে থাকতে না পারাটা তার জন্য দুর্ভাগ্যের। রুবেল বলেন, ‘তাসকিন আমার অনেক ভালো এবং কাছের একজন ছোট ভাই। তাকে আমি অনেক স্নেহ করি। সে অনেক ভালো বোলার। তবে এটি সম্পূর্ণ নির্বাচকদের ওপর নির্ভর করে। আর বিশ্বকাপ একটি অনেক বড় টুর্নামেন্ট। সুতরাং এখানে আমার আসলে বলার কিছু নেই। অবশ্যই আমার খারাপ লাগছে (তাসকিন না থাকায়)। সে বিপিএলটি অনেক ভালো খেলেছিলো, ইনজুরিতে পড়েছে আবার। আসলে এটি ব্যাডলাক ওর জন্য।’

Advertisement

বিশ্বকাপ কতটা চ্যালেঞ্জিং রুবেলের কাছে? এর জবাবে রুবেল বলেন, ‘বিশ্বকাপ তো অনেক বড় টুর্নামেন্ট। এখানে প্রতিটি দলই চাইবে ম্যাচ জিততে সবার ওপরে থাকতে। আর এবার আপনারা জানেন যে, আমাদের অনেক খেলা রয়েছে। তাই অনেকে সুযোগ পাবে, আবার অনেকে পাবে না। এটি বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। আমাদের এই ধরণের কন্ডিশনে কিভাবে বোলিং করতে হবে, কিভাবে ব্রেক থ্রু নিয়ে আসতে হবে সেটা জানতে হবে, আর আমরা বোলাররা যদি একটি দলকে কম রানের ভেতরে বা উইকেট অনুযায়ী ভালো একটি রান যদি ব্যাটসম্যানদের জন্য দিতে পারি তাহলে সেটি ভালো হবে। এটাই আরকি, বোলাররা যারাই আছে, পেস বোলার বলেন, স্পিন বোলার বলেন, সবাইকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা হবে, দলীয় পরিকল্পনা হবে, সবার সাথে কথা হবে। এরপরে সব ঠিক করা হবে।’

ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে গতিময় বোলিংয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। সে হিসেবে চ্যালেঞ্জটাও অনেক বেশি। রুবেল বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ আসলে তেমন না। ওই ধরণের কন্ডিশনে জোরে বোলিং করা একটি ফ্যাক্ট। কারণ জোরে বোলার দরকার হয়। তবে আমি নিজের কাছে নিজেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই সবসময়। আমি যখনই সুযোগ পাবো ম্যাচে তখন আপ্রাণ চেষ্টা করি ভালো খেলার জন্য। সেটাই আরকি। আপনারা জানেন যে বিশ্বকাপ অনেক বড় টুর্নামেন্ট, প্রত্যেকটি মানুষের স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে খেলার। আমারও আছে, আমি দলে আছি। ইনশাল্লাহ আমি চেষ্টা করবো ভালো করার।’

দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার কারণে বিশ্বকাপেও সেরাদের কাতারে থাকতে চান রুবেল। এ কারণে বিশ্বকাপে নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথা জানিয়ে রুবেল বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক দিন থেকে খেলছি। অবশ্যই আমার স্বপ্ন থাকবে বিশ্বকাপে পাঁচজনের মধ্যে থাকতে পারি। সে ধরণের স্বপ্ন অবশসই আমার আছে। ইনশাল্লাহ দেখা যাক। আর আমাদের নয়টি খেলা আছে। সুতরাং আমাদের সুযোগটি বেশি। কারণ বড় বড় দলগুলো সবার সাথে আমাদের খেলা আছে। আমরা যদি তাদের বিপক্ষে জিততে পারি অথবা সেভাবে খেলতে পারি তাহলে ভালো কিছু হবে।’

এআরবি/আইএইচএস/এমএস