দেশজুড়ে

যাত্রী ছাউনি ভেঙে দোকান বানানোর অভিযোগ কৃষকদল নেতার বিরুদ্ধে

ঝিনাইদহে সংস্কারের কথা বলে সরকারি যাত্রী ছাউনি ভেঙে দোকান বানানোর অভিযোগ উঠেছে কথিত এক ঠিকাদার ও বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। জেলা পরিষদের আওতাধীন হলেও অগ্রিম দুই লাখ টাকার বিনিময়ে দোকান বানিয়ে যাত্রী ছাউনি দখলে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরবাথান বাজারের যাত্রী ছাউনির পলেস্তারার কাজ করছেন মিস্ত্রিরা। ভেঙে ফেলা হয়েছে যাত্রীদের বিশ্রাম ও বসার জায়গা। দোকানের আদলে যাত্রী ছাউনির এক পাশে দরজার জায়গা রাখা হয়েছে।

কর্মরত শ্রমিকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আব্দুর রউফ নামের একজন আমাদের কাজে এনেছে। প্রথমে আমাদের বলা হয়েছিল যাত্রী ছাউনি সংস্কার করা হবে। পরে আমাদের বলা হয়েছে, তিনটি স্টিলের সাটার দরজা লাগাতে হবে। আমরা মিস্ত্রি, মজুরির বিনিময়ে কাজ করছি। এরচেয়ে বেশি কিছু জানি না।

বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কয়েকদিন ধরে মিস্ত্রি লাগিয়ে যাত্রী ছাউনির বসার জায়গা ও বিশ্রামের জায়গা ভেঙে ফেলা হয়েছে। যাত্রী ছাউনির পূর্ব পাশের দেওয়ালে দরজার জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। দু-একদিনের ভেতরে স্টিলের সাটার দরজা লাগানো হবে সামনের অংশে। যাত্রীরা এখানে বসে অপেক্ষা করত। যাত্রী ছাউনি ভেঙে দোকান বানানো হলে পথচলতি যাত্রীরা বিপাকে পড়বেন। এ ঘটনায় বাজারের সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফ লোকজন নিয়ে এসে গত শুক্রবার যাত্রী ছাউনি ভাঙার কাজ শুরু করেন। ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ও সভাপতি হায়দার আলী দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ছাউনির পাশে থাকা দোকান ভেঙে তুলে দিয়েছেন। যাত্রী ছাউনি ভাঙার সময় তারা উপস্থিত ছিলেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেছেন, জেলা পরিষদ যাত্রী ছাউনি সংস্কার করছে।

জানা গেছে, সদর উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফ কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। কথিত ঠিকাদার ইসহাক আলীর টেন্ডারের কাজ বলে দাবি করে যাত্রী ছাউনি ভাঙার কাজ করেন আব্দুর রউফ। এই কাজ তদারকি করছেন হরিণাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের হামিরহাটি গ্রামের ঠান্ডু মিয়া। তবে এই কাজের মূলহোতা সদর ঝিনাইদহ পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের ইসাহাক আলী। ঠিকাদার সেজে আব্দুর রউফ ও ঠান্ডুকে দিয়ে ইসাহাক আলী সংস্কারের নামে যাত্রী ছাউনি ভেঙে দোকান বানানোর কাজ শুরু করেন। এ কাজে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সবকিছু জানেন বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। যাত্রী ছাউনি ভেঙে দোকান বানিয়ে তা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অগ্রিম দুই লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, আব্দুর রউফ বাজারে মিস্ত্রি নিয়ে এসে যাত্রী ছাউনি ভাঙার কাজ শুরু করে। সে জানায়, ইসহাক আলী টেন্ডারের মাধ্যমে যাত্রী ছাউনি সংস্কারের কাজ পেয়েছে। কিন্তু দোকান বানানোর ঘটনা আমি জানি না।

যাত্রী ছাউনি ভাঙার সময় আপনি ছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এর সঙ্গে জড়িত না।

Advertisement

এ বিষয়ে আব্দুর রউফের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার পর সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোনকল কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ইসহাক আলী বলেন, যাত্রী ছাউনি সংস্কার কাজ করা হচ্ছিল। কাগজপত্র আছে। সাটার লাগানো হয়নি।

টেন্ডার ছাড়া কাজ করলেন কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনারা যা পারেন করেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, যাত্রী ছাউনি জেলা পরিষদের দায়িত্বাধীন। এটি আসলেই সংস্কার হচ্ছে কি না জানা নেই।

যাত্রী ছাউনির সংস্কার হলে তাতে দরজা রাখা হবে কেন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, দরজা রাখার তো কোনো যুক্তি নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, যাত্রী ছাউনি সংস্কারের কোনো কাজ কোথাও হচ্ছে না। কোনো টেন্ডারও হয়নি। কে বা কারা যাত্রী ছাউনি দখল করে দোকান বানাচ্ছে, তা জানা নেই। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ বলেন, ইসহাক আলী বিএনপির কেউ না। ভুয়া টেন্ডারের নামে এর আগেও সে প্রতারণা ও দখলবাজি করেছে। তবে আব্দুর রউফ বা বিএনপির অন্য কোনো নেতাকর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এফএ/এমএস