দেশজুড়ে

হাতীবান্ধার প্রথম চা চাষি তিনি

পিছিয়ে থাকার সময় অনেক আগেই শেষ হয়েছে। নারীরা আজ সাফল্যের পতাকা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক মেধা আর শ্রম। তেমনি লালমনিরহাট জেলায় প্রথম চা বাগান করিয়ে গোটা জেলায় আলো ছড়াচ্ছে স্বাবলম্বী নারী শাহানারা বেগম সোমা। সেই আলোয় উদ্ভাসিত অনেকে শুরু করেছেন চায়ের চাষ। শখ করে নিজের নামে বাগান টির নাম রেখেছেন সোমা টি এস্টেট।দেশের সীমান্তর্তী জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বিছনদই গ্রামে সমতলভূমিতে গড়ে উঠেছে সোমা টি এস্টেট। এই এলাকার মানুষ সোমার চা-বাগানে মঙ্গা জয়ে স্বপ্ন দেখছেন।সোমার বাগান থেকে এখন চা উৎপাদিত হচ্ছে। শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার বেশির ভাগই ওই এলাকার অভাবী নারী ও পুরুষ।শাহানারা বেগম সোমা এখন স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, চা বাগানে পাশে ব্যাংক লোন নিয়ে একটি চা প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা তৈরি করছেন। চা সরকারিভাবে ওয়ার হাউজের মাধ্যমে চা নিলামে বিক্রয় হচ্ছে।জেলায় সফল নারী শাহানারা বেগম সোমা গ্রামের আর দশটা মেয়ের মতো অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেননি সোমা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন ২০০০ সালে। পড়াশোনা চলাকালেই চাকরি করেন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থায়। লেখাপড়া শেষেও চলতে থাকা সেই চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় যান।একবার সিলেটে গিয়ে চা-বাগান দেখে মায়ায় পড়েন তিনি। এরপর পঞ্চগড়ে বাগান দেখে তার মনে স্বপ্ন জাগে চা-বাগান করার। ইতোমধ্যে বিয়ে করেন শাহানারা বেগম সোমা। স্বামী ফেরদৌস আলমকে জানান স্বপ্নের কথা। ফেরদৌসেরও ঝোঁক ছিল গাছপালা লাগানোর দিকে। ফলে খুব উৎসাহ নিয়ে সায় দিলেন স্ত্রীর কথায়। পূর্ব বিছনদই গ্রামের মাটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলো চা বোর্ডে। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে বললেন, সেখানে চায়ের চাষ করা যাবে।এরপর এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থেকে চারা এনে নিজ গ্রামের আড়াই একর জমিতে তা লাগালেন সোমা ও ফেরদৌস। পরম মমতায় নিজের সন্তানের মতো যত্ন নিতে থাকলেন চারাগুলোর।দিন দিন চা গাছগুলো বড় হতে থাকে। এক সময় নজরকাড়ে চায়ের বাগানটি। সোমা টি এস্টেট এখন ৯ একর জায়গাজুড়ে সবুজে সমাহার।২০১০ সাল থেকে নিজের বাগান থেকে চা উৎপাদন করছেন সোমা। পাতা সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে বাড়িতেই সেগুলো প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। যারা চা-বাগান দেখতে আসেন, তারাই আগ্রহী হয়ে কেনেন এই চা। জানা গেছে, ২০০৭ সালের প্রথম দিকে ৩ একর জমিতে লালমনিরহাট জেলায় প্রথম চা চাষ হয়। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চা বোডের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটি চা প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে লালমনিরহাট জেলায় ৩০ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। চা কারখানায় চা প্রস্তুত করে বাংলাদেশ চা বোর্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ওয়ার হাউজে চা নিলামে বিক্রয় হচ্ছে। বর্তমানে সোমা চা বাগানে চা বোর্ডের মাধ্যমে ১০ লাখ চারা করানো হচ্ছে। চা চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আগামী অর্থ বছরে লালমনিরহাট জেলায় ১শত হেক্টর জমিতে চা চাষ হবে। চা বোর্ডের হিসাবে ২০টি বাগান রয়েছেন। উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বিছনদই গ্রামে আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা চা বাগানে কাজ করছি। চা বাগানে কাজ করে যে টাকা পাই সেটা দিয়ে আমাদের সংসার ভালোই চলছে।শাহানারা বেগম সোমা বলেন, আমরা জেলায় প্রথম চা চাষ করি। জেলায় চায়ের চাষ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এতে জমি চাষের ঝামেলা নেই। শুধু পরিচর্যা করে পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারখানা না থাকায় ৫ থেকে ৬ বছর আমাদের কষ্ট করতে হয়েছে। শিল্প ব্যাংক থেকে ঋাণ নিয়ে চা প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা করছি। এখন আমরা চা বাজারজাত করছি।ফেরদৌস আলম বলেন, চা উৎপাদনে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি। চা উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র স্থাপন হয়েছে। আগামীতে জেলায় ১ শত একর জমিতে চা চাষ হবে।বাংলাদেশ চা বোর্ডের সহকারী উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ চা বোর্ডের মাধ্যমে লালমনিরহাট জেলার সোমা চা বাগানে প্রায় ১০ লাখ চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এই চারা চা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।রবিউল হাসান/এএম/এমএস

Advertisement