দেশজুড়ে

সময়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন সুলতানা পারভীন

তৎকালীন বিডিআর বাহিনীর সুবেদার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর ৯ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সপ্তম ছিলেন তিনি। অনেক ভাই-বোনের পড়ালেখার মাঝে নিজের পড়ালেখাটাও গতানুগতিক ভাবে চালানোর সিদ্ধান্ত হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। জীবনের অধিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে কখনো কখনো পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিজের চেষ্টা, একাগ্রতা আর সাহসিকতা কাজে লাগিয়ে পেয়েছেন সাফল্য, হয়েছেন সফল। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে জাগো নিউজের কাছে নিজের সফলতার গল্প এভাবেই তুলে ধরেন স্থানীয় সরকার বিভাগ রংপুরের উপ-পরিচালক সুলতানা পারভীন।তিনি জানান, ১৯৮৯ সালে এসএসসিতে চার বিষয়ে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে পাস করে ভর্তি হন পঞ্চগড় মহিলা কলেজে। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে যাতায়াত করতেন। এভাবেই শেষ করেন উচ্চ মাধ্যমিক। এরই মধ্যে বাবা মেজর পদে পদোন্নতি পেয়ে অবসরে যান। এরপর বাড়ি থেকে বলা হয় সেখানেই স্নাতকে ভর্তি হতে। কিন্তু তিনি রাজী হননি। বান্ধবীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে পরীক্ষা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তির সুযোগ পেলেও প্রথমে পরিবারের কেউ রাজী ছিলেন না। একপর্যায়ে পরিবারের সিদ্ধান্তে সেখানেই দর্শণ বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। সুলতানা পারভীন জানান, মাস্টার্স শেষ করার পর এবার বাড়িতে ফিরে গিয়ে সেখানেই কিছু একটা করার জন্য বলা হয়। কিন্তু সেটাতেও সায় দিলেন না। বাড়ি ফিরে গেলে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না তা ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন সেদিন। তাই সেই সময়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে শুরু করেন যুদ্ধ। টিউশনি করে চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকেন। চাকরির শুরুটা একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে হলেও একপর্যায়ে সাফল্যের দুয়ারে পা রাখেন ২০তম বিসিএস-এ প্রশাসনিক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও কাউনিয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে চাকুরি করেন। এরইমধ্যে ২০০৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি শেষ করেন। ২০১৪ সালে স্বামীসহ স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স শেষ করে ২০১৫ সালে দেশে ফিরে রংপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে যোগদান করেন। এর কিছুদিন পরে পদোন্নতি পয়ে উপ-সচিব এবং বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক পদে রংপুরেই কর্মরত আছেন।চাকরিকালীন সময়ে একজন মা ও স্ত্রী হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন দায়িত্বশীলতার। সংসার-পরিবারকে গড়ে তুলেছেন আপন আঙ্গিকে। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজে নবম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে ফেনি ক্যাডেট কলেজে এবছরই ভর্তি হয়েছে। স্বামী হুমায়ুন কবীরও একজন উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা। বর্তমানে সিনিয়র জেলা তথ্য অফিসার হিসেবে রংপুরে কর্মরত আছেন। নিজের ইচ্ছে শক্তি যে সাফল্যেরর চূড়ায় পৌঁছানোর পথকে সুগম করে তার উজ্জ্বল দৃষ্ঠান্ত সুলতানা পাভীন। আরো এগিয়ে যেতে চান, পৌঁছাতে চান সাফল্যের কাঙ্খিত লক্ষ্যে। জিতু কবীর/এফএ/আরআইপি

Advertisement