বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকার সাভার উপজেলা শাখার কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া এক নেতাকে নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি ওই তালিকা প্রকাশিত হলে ফেসবুকে তা ভাইরাল হয়।
Advertisement
যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া রাকিব মুসুল্লি কুয়াকাটা পৌর কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি মো. মজিবর মুসুল্লির ছেলে। তিনি সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ‘জয় বাংলা ক্লাব’র মহিপুর থানা শাখার সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের কলাপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয়ভাবে ফেয়ার মাইন্ড ইউনাইটেড ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করতেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মহিবুর রহমান ও তার সহধর্মিণী কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফাতেমা আক্তার রেখার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাকিব মুসুল্লি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিসহ ও সুবিধাভোগী হিসেবে নিজ এলাকায় বেশ পরিচিত। ফেসবুকে তিনি নিজেও অনেক সময় তাদের সখ্যতা প্রকাশ করতেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাকিব মুসুল্লি ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় সমাজসেবা সংগঠনের নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। যা মূলত চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহৃত হতো। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক এই সংগঠনের নামে অর্থ দিতে বাধ্য করা হতো। বিএনপি ও জামায়াতপন্থি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময় প্রশাসনের নজরে এবং মিথ্যা মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতেন রাকিব।
Advertisement
তবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর মতো তিনিও এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। ৫ তারিখের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান ও ঢাকার সাভারে আশ্রয় নেন। সাভারে গিয়ে রাকিব মুসুল্লি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে সংগঠনটির সাভার উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে জায়গা করে নেন।
আলিপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. আল সাঈদ বলেন, আমার বাবা আলীপুরের একজন বড় ব্যবসায়ী। আমরা পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো মানুষের বিরোধ নেই। শুধু বিএনপি করার অপরাধে রাকিব মুসুল্লি আমাকে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি মামলায় অন্তর্ভুক্ত করেন। তৎকালীন ওসির মাধ্যমে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময় মালামাল নিয়ে টাকা দিতেন না।
এই ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমন্বয়ক ও সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বৃহত্তর উত্তরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু সালেহ অমি বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমরা ছাত্রজনতা জীবন দিয়ে এ দেশটাকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করেছি। সেখানে একজন দোসর কীভাবে একটা উপজেলার দায়িত্ব পায়? আমরা কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের ৩৬ ঘণ্টার সময় দিয়েছি, এর মধ্যে তাকে কমিটি থেকে অপসারণ করে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।
Advertisement
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা খোঁজ নিচ্ছি। যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি (রাকিব) ফ্যাসিস্টের দোসর, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে রাকিবের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এফএ/এমএস