জাগো জবস

জাপানের মেক্সট বৃত্তিতে পড়তে যা করবেন

জাপানের মেক্সট বৃত্তিতে পড়তে যা করবেন

সায় হোসেন রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল (বিআইটি) থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল পাস করেন। এরপর জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ায় ডাবল অনার্স করেন। বর্তমানে তিনি জাপান সরকারের ‘মেক্সট বৃত্তি’তে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাসটেইনেবিলিটি সায়েন্সে মাস্টার্স পড়ছেন। তার জাপানের মেক্সট বৃত্তি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের সুযোগ তৈরির করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—সায় হোসেন: আমি ঢাকা শহরের উত্তরা এলাকায় বড় হয়েছি। শৈশব কেটেছে বেশ আনন্দে। ফুটবল খেলা ছিল আমার সবচেয়ে বড় শখের। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আমার পরিবার সব সময় পাশে থেকে সাহায্য করেছে। পড়াশোনার ব্যাপারে এবং এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি নিয়ে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে।

জাগো নিউজ: জাপান সরকারের মেক্সট বৃত্তি কী?সায় হোসেন: মেক্সট বৃত্তি হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা স্কলারশিপ। এটি জাপান সরকারের দেওয়া সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস বৃত্তি। যার মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীরা জাপানে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। সব ধরনের খরচ যেমন- অ্যাডমিশন ফি, টিউশন ফি, লিভিং কস্ট, স্টাইপেন্ড এমনকি প্লেন টিকিটও সরকার বহন করে। এটি ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য দেওয়া হয়। কোনো ধরনের জাপানি ভাষা জানার প্রয়োজন নেই।

জাগো নিউজ: মেক্সট বৃত্তিতে পড়ার ভাবনা মাথায় এলো কিভাবে?সায় হোসেন: একাদশ শ্রেণি থেকেই আমি বিদেশে পড়াশোনার চিন্তা করতে শুরু করি। বিশেষ করে ফুল স্কলারশিপ নিয়ে। এরপর ব্যাচেলরে মেক্সট স্কলারশিপ পেয়ে ব্যাচেলর করার সুযোগ পাই। ব্যাচেলর করতে করতে মাস্টার্স করার ইচ্ছা জাগে ফুল স্কলারশিপের মাধ্যমে। তাই ব্যাচেলরের ৪র্থ বছরে সিদ্ধান্ত নিই, আবার মেক্সট স্কলারশিপে মাস্টার্সের জন্য আবেদন করবো। বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব টোকিওতে।

Advertisement

জাগো নিউজ: মেক্সট বৃত্তিতে টোকিও ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাওয়ার গল্প শুনতে চাই—সায় হোসেন: আমার ব্যাচেলরের চতুর্থ বছর থেকে মেক্সট স্কলারশিপের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিই ইউনিভার্সিটি অব টোকিওর কোন ডিপার্টমেন্টে যাবো, কোন প্রফেসরের অধীনে মাস্টার্স করবো। এরপর সেই অনুযায়ী ৪র্থ বছরেই রিসার্চ কন্ডাক্ট করি এবং থিসিস লিখি। রিসার্চে অনেক অ্যাচিভমেন্ট এবং অ্যাওয়ার্ড পাই, যেমন- থ্রি মিনিট থিসিস ফাইনালিস্ট, এসআরসি রিসার্চ কম্পিটিশন রানার আপ ইত্যাদি। এ ছাড়া রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও চাকরি পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করি। এরপর সব কাগজপত্র ম্যানেজ করে ব্যাচেলরের শেষ সেমিস্টারে আবেদন করি। ইন্টারভিউও হয়। সবশেষে স্কলারশিপসহ অ্যাডমিশন অফার পেয়ে টোকিও ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সের জন্য ভর্তি হই।

জাগো নিউজ: বৃত্তি পেয়ে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?সায় হোসেন: খুব ভালো লাগছিল। আমি আশাবাদী ছিলাম মেক্সট স্কলারশিপ পাবো। মেক্সট স্কলারশিপ এমন একটা স্কলারশিপ; টিপস এবং ট্রিকসগুলো জানা থাকলে অবশ্যই পাওয়া সম্ভব। তাই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, যদি সঠিকভাবে অ্যাপ্লিকেশন করি তাহলে অবশ্যই মেক্সট বৃত্তি পাবো।

আরও পড়ুন বিদেশে পড়তে যাওয়ার পর যেসব বিষয় জানা জরুরি  বিদেশে পড়াশোনা করবেন কেন? 

জাগো নিউজ: এই বৃত্তি পেতে কিভাবে আবেদন করতে হয়?সায় হোসেন: মেক্সট স্কলারশিপে আবেদন করার দুটি পদ্ধতি আছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে, অন্যটি দূতাবাসের মাধ্যমে। প্রথম পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আবেদন; এখানে সরাসরি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আপনার অ্যাপ্লিকেশন যদি ভালো হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে মেক্সট স্কলারশিপ অফার করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় আপনার সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে মেক্সট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। এ প্রক্রিয়ায় আপনি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে মেক্সট স্কলারশিপের জন্য আবেদন করবেন। কোনো জাপানি ভাষা জানার প্রয়োজন নেই এবং সাধারণত কোনো লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় না।

অন্যদিকে দূতাবাসের পদ্ধতিতে, প্রথমে আপনাকে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাপানি দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। এতে নির্বাচিত হলে আপনাকে লিখিত পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ দিতে হবে। ২০২৫ সালের লিখিত পরীক্ষার জন্য ২৫ জন অনার্স এবং ৩০ জন মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। তারা সবাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন এবং এরপর এখান থেকে কয়েকজনকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে। সবশেষে হাতেগোনা কয়েকজনই মেক্সট পাবেন। নির্বাচিত হলে, দূতাবাস আপনার আবেদন মেক্সট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে এবং সবশেষে মেক্সট স্কলারশিপ পাবেন। এ প্রক্রিয়ায় কোনো বিশেষ এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি দরকার হয় না। দুই পদ্ধতির স্কলারশিপের সুবিধা একই, শুধু আবেদন প্রক্রিয়াটি ভিন্ন।

Advertisement

জাগো নিউজ: আবেদনের ক্ষেত্রে কী কী কাগজপত্র লাগবে?সায় হোসেন: মেক্সট স্কলারশিপে আবেদনের দুটি পদ্ধতির মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও সাধারণত কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। যদি আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আবেদন করেন, তখন সাধারণত শিক্ষাগত সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট, পাসপোর্টের কপি, রিসার্চ প্রোপোজাল (বিশেষত মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য), দুটি বা তার বেশি রেফারেন্স লেটার, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ (যেমন- টোফেল, আইইএলটিএস বা এমওআই), এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের প্রমাণ, এসে বা এসওপি (স্টেটমেন্ট অব পারপাজ) এবং পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দিতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় কোনো লিখিত পরীক্ষা বা ইন্টারভিউয়ের দরকার হয় না। জাপানি ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন নেই।

আর যদি দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করেন, তাহলে কিছুটা আলাদা প্রক্রিয়া। এখানে শিক্ষাগত সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট, পাসপোর্টের কপি, রিসার্চ প্রোপোজাল (বিশেষত মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য), রেফারেন্স লেটার, মেডিকেল সার্টিফিকেট, ছবি (পাসপোর্ট সাইজ) আর অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ফর্ম জমা দিতে হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করার সময় আপনাকে লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণও লাগবে।

জাগো নিউজ: মেক্সট বৃত্তিতে কী কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে?সায় হোসেন: মেক্সট বৃত্তিতে সব ধরনের খরচ যেমন- অ্যাডমিশন ফি, টিউশন ফি, লিভিং কস্ট, স্টাইপেন্ড এমনকি প্লেন টিকিটও সরকার বহন করে। আপনার ভিসার জন্য কোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর প্রয়োজন নেই বা ফান্ড দেখানোর দরকার নেই। আপনি জাপানি সরকারের গেস্ট হিসেবে যাচ্ছেন। আপনার ভিসা সাব ক্যাটাগরি হবে মেক্সট স্কলার। এটি অনেক সম্মানের বিষয়। মেক্সট স্কলারশিপে জাপানে আপনাকে অনেক সম্মান দেবে। এ স্কলারশিপে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ আছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রতি সপ্তাহে ২৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান। গ্রীষ্ম বা শীতের ছুটিতে প্রতি সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারেন।

এসইউ/জিকেএস