দেশের মহাসড়কগুলো নিরাপদ রাখতে কাজে আসছে না পুলিশের নানাবিধ পদক্ষেপ। জনসচেতনতায় মাইকিং, পোস্টারিং, অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তা টহল বাড়িয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ছিনতাই-ডাকাতি। দিনের যাত্রাও নিরাপদ নেই। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আতঙ্কে ভুগছেন পশু ব্যবসায়ীরাও।
Advertisement
হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, জনবল কম থাকায় বাড়তি ফোর্স নিয়ে মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন তারা। মাইকিং, পোস্টারিং করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। গভীর রাতে চলছে টহল। দেশের আটটি মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৫০ কিলোমিটারজুড়ে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা। এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, টহল আর তদারকির মধ্যেও মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না।
মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে। চলন্ত বাসে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো যেন এখন সৌভাগ্য। বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় বাসচালক ও সহকারীর জড়িত থাকার প্রমাণও পেয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ৫ আগস্টের পর অনেক মামলার আসামির জামিন হয়েছে। জামিনে বের হওয়া ডাকাতদের তৎপরতা বেশি।
Advertisement
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের বেশিরভাগ মহাসড়কে ডাকাতি ও ডাকাতিচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এসময় ডাকাতদলের হানায় আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। তবে ডাকাতির ঘটনা অনেক হলেও মামলা এবং গ্রেফতারের সংখ্যা কম।
এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশুবাহী পরিবহন ঢাকায় আসবে। এসব পরিবহনে ডাকাতির আশঙ্কা করছেন কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে ৩৯ জন ফোর্স বরিশাল থেকে আমাদের এখানে এসেছে। তারা গত দুদিন থেকে ডিউটিও শুরু করেছে। ঈদ পরবর্তীসময় পর্যন্ত এ ডিউটি চলমান থাকবে। সাভার এলাকায় নতুন কিছু চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া যাত্রীবেশে ডাকাত-ছিনতাইকারীদের ধরতে প্রতিটি বাসে তল্লাশি চালানো হবে।- সাভার থানা হাইওয়ে পুলিশের ওসি বিষ্ণুপদ শর্মা
কুষ্টিয়ার গরু ব্যাপারী জয়নাল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চাই কোরবানির ঈদে নিরাপত্তার সঙ্গে যেন ঢাকায় গরু নিয়ে যেতে পারি। আগে অনেক সময় মাঝ রাস্তায় জোর করে অন্য হাটে গরু নামিয়ে নেওয়া, এমনকি ট্রাক ডাকাতিও হয়েছিল। এর থেকে পরিত্রাণ চাই আমরা।’
Advertisement
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দেশের আটটি মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪১ জনকে। দেশের আটটি হাইওয়ের মধ্যে শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৫০ কিলোমিটার এলাকায় এক হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য হাইওয়েও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতিসম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ অংশে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনা যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের হটস্পট খ্যাত কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত প্রায়ই ঘটছে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। আগস্ট পরবর্তীসময়ে রাত হলেই এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের প্রায়ই পড়তে হচ্ছে ডাকাত ও ছিনতাইকারীর কবলে।
আরও পড়ুন সড়কে সিসি ক্যামেরা, থাকছে হাজারের বেশি চেকপোস্ট-টহল টিম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই, ‘মব’ শঙ্কায় হাইওয়ে পুলিশ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ডাকাত আতঙ্ক, বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল ডাকাতদের তালিকা প্রস্তুত, সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে মহাসড়কগত ১৪ জানুয়ারি আবু হানিফ ও রাজিব ভুঁইয়া নামে দুই প্রবাসী ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে মহাসড়কের বন্দর এলাকার কেওঢালা এলাকায় ডাকাতদের কবলে পড়েন। র্যাব পরিচয়ে বাস থেকে তাদের নামিয়ে নিয়ে সবকিছু কেড়ে নেয়।
ঢাকায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টার দিকে ডেমরা হয়ে কাঁচপুরের দিকে ঢুকতেই ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন কুমিল্লার বুড়িচংয়ের কংসনগর এলাকার প্রাইভেটকারচালক মো. হাসান। তিনি বলেন, আমি ডাকাতদের অনুরোধ করি গাড়ি না ভাঙার জন্য, পরে আমার সঙ্গে থাকা ছয় হাজার টাকা তাদের দিয়েছি। আমার পেছনে থাকা একটি মাইক্রোবাসে ছিলেন দুই প্রবাসী। তারা মালামাল দিতে দেরি করায় রামদা দিয়ে কুপিয়ে পুরো গাড়ি ভেঙে দেয় এবং সব লুট করে। মহাসড়কে পিকআপ রেখে তারা ডাকাতি করছিল।
২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে মহাসড়কের সোনারগাঁ পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাড়িয়ারচর এলাকার সাধু পেপার মিলের সামনে সিরাজুল ইসলাম নামে এক কুয়েত প্রবাসী ডাকাতির শিকার হন। সেই রাতে ভুক্তভোগীকে বহনকারী গাড়িতে হামলা চালিয়ে পাসপোর্টসহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই রাতেই অসুস্থ বোনকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে আসা এক নারী ও তার দেবর ছিনতাইয়ের শিকার হন।
সবশেষ ১৫ মার্চ দুপুরে মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের দড়িকান্দি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দিনদুপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের মাইক্রোবাস থামিয়ে ফিল্মি স্টাইলে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ডাকাতি করা হয়।
আমাদের গাড়ি সংকট থাকায় আইজিপি স্যার নিজে গাড়ি ভাড়া করে হাইওয়ে পুলিশের জন্য দিয়েছেন। ৭শ অতিরিক্ত ফোর্সও দেন তিনি। তারা গত ২ মে তারা কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া দু-তিনশ ফোর্স যুক্ত হবে ঈদের আগে।- হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন) মো. শফিকুল ইসলাম
প্রতিনিয়ত ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় অতিষ্ঠ এই মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। অথচ একমাত্র এই মহাসড়কে ১৪২৭টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে।
ঢাকা-রাজশাহী-টাঙ্গাইল রুটে ডাকাতিঢাকা-রাজশাহী, রাজশাহী-নওগাঁ ও রাজশাহী-বগুড়া মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছেন যাত্রী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। গত তিন মাসে এসব রুটে রাতের বেলায় চলাচলকারী যানবাহনে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যানজটে আটকা পড়া বাসেও ডাকাতি হয়। নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনাও সামনে এসেছে।
গত ৯ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরার পথে রাজশাহী জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাত নেতা ডাকাতির শিকার হন। ডাকাতদল তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ও নগদ ৮১ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী-নওগাঁ ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে অন্তত সাতটি বাসে ডাকাতি হয়। বিআরটিসি বাস ডিপো-সংশ্লিষ্টরা জানান, পাবনা থেকে নওগাঁর সাপাহার রুটে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে একটি বিআরটিসি বাস ডাকাতের কবলে পড়ে। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে রাজশাহী-নওগাঁ রুটের আরেকটি বিআরটিসি বাস কলমিডাঙ্গা এলাকায় ডাকাতির শিকার হয়। তিন দিন পর রাজশাহী থেকে নাটোর যাওয়ার পথে মদমইল এলাকায় আরেকটি বিআরটিসি বাস ডাকাতের কবলে পড়ে। এমনকি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-রাজশাহী রুটের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় দুই নারী যাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় নাটোরের বড়ইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারও করা হয়।
বিআরটিসি বাসের চালক সোহেল রানা গত ১৯ ফেব্রুয়ারির একটি ঘটনায় পোরশা থানায় অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এখন এই রুটে চালকরা বাস চালাতে ভয় পাচ্ছেন। যাত্রীরা চালকদের সন্দেহ করে। কিন্তু সমস্যা হলো, রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
রাজশাহী পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রফিক আলী পাখি বলেন, ‘সড়কে হঠাৎই ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। যাত্রী ও শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হাইওয়ে পুলিশের পেট্রোলিং বাড়ানো উচিত।’
বগুড়া রিজিওনাল হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার শহীদ উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে মহাসড়কে টহলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, এমন কিছু থাকলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। পশুবাহী ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল রোধে কাজ চলছে। এছাড়া ঢাকা বা চট্টগ্রামগামী কোন হাটে পশুবাহী গাড়ি যাবে সেটা আগেই গাড়িতে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হবে। যাতে রাস্তার মাঝ থেকে গরু টানাটানি না হয়।’
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার অংশ, বিশেষ করে ব্যাংক টাউন ও পুলিশ টাউন এলাকাটি বর্তমানে যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। একের পর এক বাসে ডাকাতির ঘটনায় নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো যেন এখন দুঃস্বপ্ন। শুধু এই রুটেই গত দুই মাসে পাঁচটি ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে দিনে-দুপুরে ডাকাতির ঘটনাও। অথচ এই মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যেও ঘটেছে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা।
গত ঈদে সবগুলো মহাসড়কেই কড়া নিরাপত্তা ছিল হাইওয়ে পুলিশের। মাঝে কিছুটা ঢিলেঢালা ছিল। এখন থেকে আবারও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুবাহী পরিবহনের নিরাপত্তায় পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।- হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা
১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশ টাউন এলাকায় মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার গাবতলীগামী শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের মোবাইল, মানিব্যাগ ও স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে বাসের সহকারীসহ অন্তত তিনজন আহত হন।
মার্চ মাসেই ঘটে তিনটি ডাকাতির ঘটনা। ২ মার্চ এই মহাসড়কের ব্যাংক টাউন এলাকায় রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ থেকে ২৫ যাত্রীর মোবাইল, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেন ডাকাতেরা। এর ঠিক দুই দিনের মাথায় কর্ণপাড়া ব্রিজ এলাকায় ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসে ও ২৫ মার্চ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগরগামী লেনে শুভযাত্রা পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে প্রায় ২০টি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে।
এপ্রিল মাসের ১১ দিনের মাথায় দুটি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ৫ এপ্রিল সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ইতিহাস পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি করে টাকা, সোনার চেন, কানের দুল, মোবাইল কেড়ে নেন। ১১ এপ্রিল একই এলাকায় দিনে-দুপুরে চলন্ত বাসে ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় চালক ও সহকারী জড়িত বলে জানায় হাইওয়ে পুলিশ।
তবে বাস্তবতা হলো ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একের পর এক বাস ডাকাতি সংঘটিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনারই কার্যকর সমাধান হয়নি। যদিও হাইওয়ে পুলিশ বলছে, এই এলাকায় দিন-রাত তাদের একটি টিম টহল দিচ্ছে।
সাভার থানা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিষ্ণুপদ শর্মা জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশে জনবল অনেক কম। তবে আসন্ন ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে ৩৯ জন ফোর্স বরিশাল থেকে আমাদের এখানে এসেছে। তারা গত দুদিন থেকে ডিউটিও শুরু করেছে। ঈদ পরবর্তীসময় পর্যন্ত এ ডিউটি চলমান থাকবে। সাভার এলাকায় নতুন কিছু চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া যাত্রীবেশে ডাকাত-ছিনতাইকারীদের ধরতে প্রতিটি বাসে তল্লাশি চালানো হবে।’
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ডাকাতিগত ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মাহমুদাবাদ সেতুসংলগ্ন নামাপাড়া এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল একটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। এসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ ৯৫ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল ফোন এবং স্বর্ণালংকার লুট করা হয়।
হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন) মো. শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের গাড়ি সংকট থাকায় আইজিপি স্যার নিজে গাড়ি ভাড়া করে হাইওয়ে পুলিশের জন্য দিয়েছেন। ৭শ অতিরিক্ত ফোর্সও দেন তিনি। তারা গত ২ মে তারা কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া দু-তিনশ ফোর্স যুক্ত হবে ঈদের আগে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশগামী যাত্রীদের ডাকাতি রোধে ভাড়া করা গাড়ির ব্যক্তিগত চালককে লোকেশন শেয়ারের জন্য বলা হয়েছে। এতে বিদেশগামী যাত্রীদের ডাকাতি-ছিনতাই কমে এসেছে।’
মহাসড়কে ডাকাতি বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ঈদে সবগুলো মহাসড়কেই কড়া নিরাপত্তা ছিল হাইওয়ে পুলিশের। মাঝে কিছুটা ঢিলেঢালা ছিল। এখন থেকে আবারও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় পশুবাহী পরিবহনের নিরাপত্তায় পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
হাইওয়ে পুলিশের জনবল সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের জনবল মাত্র দুই হাজার ৮৭৪ জন। সারাদেশে জনবল দরকার ১০ হাজার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা ছয় হাজার জনবলের প্রস্তাব দিয়েছি। যদি ছয় হাজার জনবলও আমরা পাই তাহলে ডাকাতি অনেকাংশে কমে আসবে।’
ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেক মামলার আসামি জামিন পেয়েছেন। এসব অপরাধী-ডাকাতদের তৎপরতা বেড়েছে। ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০ বছরে মহাসড়কে ডাকাতির বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত এক হাজার ৪শ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে জেলা পুলিশকেও অবহিত করা হয়েছে। জেলা পুলিশ ও আমরা ডাকাতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। আশা করি, গত ঈদের মতো আগামী ঈদুল আজহায়ও অপরাধমুক্ত ও স্বস্তির সঙ্গে যাত্রা করতে পারবে সাধারণ যাত্রী এবং পশুবাহী পরিবহন।
টিটি/এএসএ/এমএফএ/এএসএম