ইতেকাফের প্রধান ও জরুরি আমল হলো মসজিদে অবস্থান করা। শরঈ ওজর বা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যায়। ইতেকাফরত অবস্থায় অজু, ফরজ-গোসল ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন শরঈ ওজর গণ্য হয়। এ সব প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া যায়। কিন্তু গোসল ফরজ না হলে অপ্রয়োজনীয় গোসল শরঈ ওজর বা জরুরি প্রয়োজন গণ্য হয় না। তাই অপ্রয়োজনীয় গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না।
Advertisement
তবে কেউ যদি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য বা অজু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়, তখন দ্রুত শরীরে পানি ঢেলে নিলে ইতেকাফের ক্ষতি হবে না। কিন্তু গোসলের জন্য দীর্ঘ সময় মসজিদের বাইরে অবস্থান করা জায়েজ হবে না। কেউ যদি শুধু অপ্রয়োজনীয় গোসল করার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়, তাহলে তার ইতেকাফ ভেঙে যাবে।
ইতেকাফরত অবস্থায় রোজা রাখা জরুরি। কেউ যদি কোনো প্রয়োজনে রোজা ভেঙে ফেলে বা কোনোভাবে রোজা ভেঙে যায়, তাহলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে। যেমন কেউ যদি অসুস্থতার কারণে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে। একইভাবে ইচ্ছাকৃত পানাহার, সহবাস বা জাগ্রত অবস্থায় ইচ্ছাকৃত বীর্যস্খলন ঘটানোর কারণে কারো রোজা ভেঙে গেলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে।
ইতেকাফে আল্লাহ তাআলার স্বরণ ও ইবাদতে মগ্ন থাকুন
Advertisement
ইসলামে ইতেকাফ নিজেকে পরিশুদ্ধ করা ও আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার উপায়। ইতেকাফের উদ্দেশ্য দুনিয়াবি সব ঝামেলা ও ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ঘরে আল্লাহ কাছে অবস্থান করা এবং শুধু তাঁর ধ্যানে নিজের মনকে নিবিষ্ট করা।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ইতেকাফের উদ্দেশ্য হলো অন্তরকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট করা এবং শুধু তাঁর দিকে মনোনিবেশ করা। তাঁর সাথে নির্জনে সময় কাটানো। সৃষ্টিকুলের সাথে ব্যস্ততা ত্যাগ করে একমাত্র স্রষ্টা ও মালিকের সাথে ব্যস্ত হওয়া এমনভাবে যেন তাঁর স্মরণ, ভালোবাসা এবং তাঁর দিকে ফিরে আসা অন্তরের মূল চিন্তা ও উদ্বেগের বিষয় হয়। দিন-রাত তাঁর স্মরণে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার উপায় নিয়ে ভেবে অতিবাহিত হয়। ইতেকাফের উদ্দেশ্য সৃষ্টির সংস্পর্শের আনন্দের পরিবর্তে আল্লাহ তাআলার সংস্পর্শের আনন্দ লাভ করা। ইতেকাফ আমাদেরকে কবরের নির্জনতায় আল্লাহর সংস্পর্শ লাভের আনন্দের জন্য প্রস্তুত করে, যখন আর কোনো সঙ্গী থাকবে না এবং তারা আনন্দের কারণও হবে না। (যাদুল মাআদ)
ইমাম ইবনুল কাইয়িমের (রহ.) এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ইতেকাফ কেমন হওয়া উচিত। আজকের দিনে অনেকের ইতেকাফ দেখে মনে হয়, ইতেকাফের উদ্দেশ্য শুধু মসজিদকে অবস্থান ও ঘুমানোর জায়গা বানানো। ইতেকাফে মসজিদে বসেই অপ্রয়োজনীয় বেচাকেনা, ব্যবসার কাজ, গল্পগুজব, হাসি-ঠাট্টা, অনর্থক কথাবার্তা ইত্যাদি চলতে থাকে। এমন কি গিবত, অপবাদ ইত্যাদির মতো গর্হিত গুনাহও ইতেকাফের সময় হয়ে যায়।
রমজানের শেষ দশ দিনের সুন্নত ইতেকাফে যারা বসেছেন, তাদের উচিত এসব বিষয়ে সচেতন ও সাবধান থাকা।
Advertisement
ওএফএফ/এএসএম