দেশজুড়ে

১৫ বছর পর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে ইমামতির দায়িত্বে মুফতি ছাইফুল্লাহ

১৫ বছর পর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে ইমামতির দায়িত্বে মুফতি ছাইফুল্লাহ

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। তবে এবার ইমামতিতে থাকছেন না মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এবার এই জামাতে ইমামতি করবেন কিশোরগঞ্জ শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসার প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবুল খায়ের মোহাম্মদ নূরুল্লাহ টানা ৩০ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমামতি করেন। ২০০৩ সালে বার্ধক্যের কারণে এ দায়িত্ব থেকে তিনি সরে যান। ২০০৪ সাল থেকে তার ছেলে আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমামতি করে আসছিলেন। ২০০৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ছাইফুল্লাহকে ইমামতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। পরে ইমামতির দায়িত্ব পান ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। গত বছরের ৫ আগস্ট গঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে আসামি করা হয়। তখন থেকে তিনি পলাতক।

দেশের বৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। বিশাল এ মাঠে নামাজে অংশ নেওয়া লাখ লাখ মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জামাত শুরুর সংকেত হিসেবে গুলি ছুড়ে আওয়াজ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে রেওয়াজ অনুযায়ী ঈদের জামাত শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি করে শটগানের গুলি ছোড়া হয়। আর এ গুলিগুলো ছোড়েন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার।

আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তার স্বার্থে এবারও ঈদগাহে টুপি, জায়নামাজ ও মোবাইল ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছাতা নিয়েও ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের একদিন আগেই চলে এসেছেন অনেক মুসল্লি। ঈদের দিন ভোর থেকেও রিজার্ভ বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে আসেন লাখ লাখ মুসল্লি। নামাজ শুরুর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।

নামাজকে কেন্দ্র করে ঈদগাহ ময়দানে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চারটি স্তরই পেরিয়ে মুসল্লিরা মায়দানের ভেতরে প্রবেশ করবেন। পোশাকে ও সাদা পোশাকেও মোতায়েন থাকবে প্রায় ১১০০ পুলিশ। নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে থাকবে চারটি ড্রোন।

ঈদগাসহ আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ঈদগাহে রয়েছে পুলিশ ও র্যাবের ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। থাকবে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল। মোতায়েন করা হয়েছে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সোমবার সকাল ১০টায়। এবারের ঈদুল ফিতরের জামাতের ইমামতি করবেন শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিরা ছাতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না। ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

Advertisement

কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম জানান, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমামকেও পরিবর্তন করা হয়েছিল। যাকে (ফরীদ উদ্দীন মাসুদ) এই ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানে ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তিনি একজন বিতর্কিত আলেম। এই কারণে অনেক মুসল্লি শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিতেন না। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশ এবার সর্বোচ্চ মুসল্লি শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে অংশ নেবেন বলে আশা রাখি।

এসকে রাসেল/এসআর/এমএস