‘আমাদের ঈদ বলে আগে কিছু ছিলো না। এখনও নাই। যেদিন থেকে নিজে বুঝা শিখেছি, সেদিন থেকে ঈদ নাই। হারিয়ে গেছে।’ রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর) বেডে বসেই কথাগুলো বলছিলেন জুলাই গণঅভুত্থানে আহত ইমন কবির (২২)। চলাফেরা করতে না পারার কারণে হাসপাতালের বেডেই কাটাবেন ঈদ।
Advertisement
ঈদের আগের দিন ৩০ মার্চ (রোববার) নিটোরের জুলাই আহতদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ডে দেখা গেছে, অনেকেই সিটে নাই। মেলা ভেঙে যাওয়ার মতো পরিবেশ। তবে ১০/১২ জন যারাই আছেন, তারা বেশ খোশ মেজাজে। একে অপরের কাছে সালামি চাইছেন। দিচ্ছেন।
ঢুকতেই চোখে পড়ে ইমন কবিরের দিকে। পাত বসানো পা নিয়ে বেডে বসে আছেন হাস্যোজ্জ্বল এই তরুণ। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেমে ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন। মরণঘাতি গুলি তার পায়ের হাড্ডি ভেদ করে পাশের লোকের গোড়ালিতে গিয়ে বিঁধেছে। হাসপাতালের বেডে ৯ মাস মা-ই পাশে ছিলেন। ঈদেও মা-ই তার পাশে আছেন।
যশোরের এই সন্তান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, পুরো রোজায় হাসপাতাল থেকে ইফতারি ও সেহরি ভালো মতো পাইছি। যার কারণে রোজা রাখতে পেরেছি। যেহেতু চলাফেরা করতে পারি না। তাই ঈদগাহেও যাওয়া হবে না। তাই ঈদ নিয়ে অতো আগ্রহও নেই। ওভাবে ঈদ শপিংও করিনি। তবে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ওয়ান টাইমইউজের জন্য একটা পাঞ্জাবি দিয়ে গেছেন।
Advertisement
তার পাশের বেডের আরেক আহত আব্দুল্লাহ আহমদ। আদমজী কলেজের ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের কিউট এই ছেলেটার পায়ের ওপর দিয়ে পুলিশের গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে। তিনিও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। স্ট্রেচারে ভর করে জরুরি কাজ সারেন। হুইল চেয়ারে করে হলেও ঈদ জামাতে শামিল হতে চান। তাই বাবা তাকে নিয়ে যাচ্ছেন আবার দিয়ে যাবেন।
আরেক আহত ভোলার মো. শাকিল। গুলশানে একটা ভবনে কনস্ট্রাকশনের কাজ করতেন। ৫ তারিখে গুলশানেই আন্দোলনে নামেন। তাকে পিটিয়ে পায়ের হাড্ডিগুলো গুড়ো করে ফেলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারও ঈদ করতে হবে হাসপাতালেই। কারণ তিনিও স্বাভাবিকভাবে চলতে পারেন না।
শুধু ইমন, শাকিল নয়, বর্তমানে নিটোরে দুটি ওয়ার্ডে ১০৫ জন জুলাইযোদ্ধা চিকিৎসাধীন। তাদের বেশিরভাগ আশপাশে বাড়ি হওয়ার ঈদের নামাজ পড়ার জন্য গেছেন। রয়ে গেছেন ২৫/৩০ জন। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরা করার সুযোগ নেই। তাই তাদের ঈদ কাটবে হাসপাতালের বেডেই।
রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (নিটোর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কেনান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে জরুরি চিকিৎসায় প্রতিদিন ১৫ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করবেন। এরমধ্যে জরুরি বিভাগ, ওটি ও ইনডোরের টিম করে দেওয়া আছে। বিশেষ করে জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আহতদের জন্য বিশেষ টিম করে দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য ঈদে বিশেষ খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
Advertisement
নিটোরের পাশে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০৭ জন ভর্তি আছেন। কিন্তু তাদের বেশিরভাগ ঈদগাহে নামাজে শামিল হওয়ার জন্য চলে গেছেন। যারা আছেন, তাদের ঈদগাহে যাওয়া বা নামাজ পড়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই।
এসইউজে/জেএইচ/এমএস