অফিস কয়েকদিন বন্ধ। ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মনে মনে পরিকল্পনা করছিলেন, এবার হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের গহীনে পৌঁছবেন। কিন্তু হুট করেই বেঁকে বসলেন স্ত্রী, তিনি সঙ্গে যাবেন। এবার? পারিবারিক এমন প্রেক্ষাপটে পুরুষরা দ্বিধায় ভোগেন, যুক্তি খোঁজেন। স্ত্রীকে নিয়ে পাহাড় ট্র্যাকিংয়ে রাজি হোন না অধিকাংশ পুরুষ! এককথায় যেন, এটি পুরুষের বিশ্বাস বা আদর্শ—‘পাহাড়ে হেঁটো একা, সমুদ্রে যাও দোকা (দুজন)’। নানা কারণে একজন পুরুষ স্ত্রীকে নিয়ে পাহাড়ে হাইকিং বা ট্র্যাকিংয়ে যেতে চান না!
Advertisement
চলুন দেখে নিই কিছু সুবিধা-অসুবিধা এবং পরিবেশ-প্রেক্ষাপট। আর নারী-সঙ্গীকে নিয়ে পাহাড় ট্র্যাকিংয়ে কী কী ভোগান্তি থাকতে পারে—
থাকা-খাওয়াদেশের হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা ছাড়া পাহাড়ে থাকার ব্যবস্থা খুবই কম। পাহাড়ের গহীনে যে পর্যটকরা ঘুরতে যান; তারা মূলত গাইডের নির্দেশনায় দ্রুত ফিরে আসেন। এ ছাড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জুমঘরগুলোয় কোনোমতে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। এমন পরিবেশে সাধারণত তরুণ-পুরুষরা কোনোমতে মানিয়ে নিলেও নারীদের পড়তে হয় বিপাকে।
পাহাড় ট্র্যাকিং কষ্টদায়কপার্বত্য অধিকাংশ পয়েন্টে যেতেই জিপ থেকে নেমে হাঁটা শুরু করতে হয়। পাহাড় ট্র্যাকিং একটু কষ্টদায়ক। ঝিরিপথ, পিচ্ছিল কিংবা ধারালো পাথর, গিরি খাদ, লম্বা দূরত্বে হাঁটা, উঁচুতে ওঠা, এসব ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার ক্ষেত্রে নারীরা দ্রুতই হাঁপিয়ে ওঠেন। এরপর তাকে বহন করতে করতে পুরুষও ক্লান্ত হয়ে যান।
Advertisement
পাহাড়ে পানি ও খাবারের অপ্রতুলতা থাকে। চাইলেই পাওয়া দুষ্কর। পানির চাহিদা মেটাতে লিটারে লিটারে পানি নিলেও তৃষ্ণা মেটাতে তা খুব স্বল্পই মনে হবে। খুব দ্রুতই পানি শেষ হয়ে যাবে। আর খুব বেশি পানি পরিবহনও সম্ভব হয় নয়। ফলে ক্লান্তি যেন পর্যটকের ওপর জেঁকে বসে।
নিরাপত্তাহীনতাগহীন পাহাড়ে লোকজনের দেখা মিলবে খুব কম। জনবসতি নেই বললেই চলে। আদিবাসীদের কিছু কিছু ঘর-বাড়ি মিললেও তা অনেক অনেক দূরে। ফলে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। এর ওপর কোনোভাবে অসুস্থ হয়ে গেলে তো সর্বনাশ।
তুলনামূলক খরচ বেশিপাহাড়ের ট্র্যাকিংয়ে গাইড দরকার। ক্ষেত্রবিশেষ আপনার বোঝা বহনের জন্য আরেকজনকেও ভাড়া করতে হয়। পাহাড়ি পথের লোকাল ট্রান্সপোর্টেও বেশ খরচ। এককথায় বলা চলে, পাহাড় ট্র্যাকিংয়ে তুলনামূলক খরচ খুব বেশি।
আরও পড়ুন
Advertisement
বাস্তবতা এমন—ট্র্যাকিংয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে একটি গামছা, একটি লুঙ্গি, একটি ট্রাউজার ও দুটি টি-শার্ট ছাড়া খুব বেশি কিছু লাগে না। সত্যি বলতে, এর বিপরীত নারীদের ক্ষেত্রে। পোশাক-মেকআপ ও হরেক প্রসাধনীতে ভারী হয়ে ওঠে ব্যাগ। পাহাড়ে বোঝা বহন যে কতটা কষ্টকর, তা তারাই বোঝেন; যারা ভারী কোনো ব্যাগ বহন করেছেন। এসব কারণেই নারী-সঙ্গী নিয়ে পাহাড় ট্র্যাকিংয়ে নারাজ পুরুষ। এখন প্রশ্ন জাগে—স্ত্রী সমেত কোথায় যাওয়া যায়? নিশ্চিন্তে আপনার মন উত্তর দেবে, ‘চলো সমুদ্রে’। এর স্বপক্ষে কিছু যুক্তিও মেলে।
পরিবেশপাহাড়ে ট্র্যাকিংয়ে স্ত্রীকে নিতে মন চাইবে না। কিন্তু সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে গেলে প্রিয়তমার অগ্রাধিকার যেন সবার আগে। বলা চলে, প্রিয়তমাকে ছাড়া সমুদ্রপাড়ে সময় যেন নিরানন্দ কাটে। সমুদ্র ভ্রমণে নারীসঙ্গ তৃপ্তিদায়ক। এর কারণ কী? কারণ সমুদ্রপাড়ের পরিবেশই এমন।
থাকা-খাওয়াদেশের সমুদ্র দেখার অন্যতম কেন্দ্র কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন বা কুয়াকাটাসহ প্রসিদ্ধ সৈকতগুলোতে পরিবার-স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকা-খাওয়ার বেশ ভালো পরিবেশ আছে। একাধিক হোটেল-মোটেল-রেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে নিজের ইচ্ছামতো সময় কাটানোর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাই পর্যটকের থাকা-খাওয়া নিয়ে কোনো বেগ পেতে হয় না।
কষ্ট নেই, আছে বাতাসপাহাড়ে উঠতে হাঁপিয়ে যেতে হয়। ঘামে ভিজে যাবে দেহ। শীতের দিনেও প্রচণ্ড গরম লাগবে। গরমে শ্বাস যেন বেড়িয়ে যেতে চাইবে। অথচ সমুদ্রে বাতাস শীতল পরশ বোলায় খাঁ-খাঁ গরমের দুপুরেও। সৈকতে ট্র্যাকিংয়ে কোনো কষ্ট নেই। বরং বিচের খাটিয়ায় শুয়ে প্রেমালাপ জমবে। ফেলে আসা গল্পরাও ফিরে আসবে।
যাতায়াতবাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায়, পাহাড়ের চেয়ে সমুদ্রসৈকতগুলোয় যাতায়াত সহজ। পরিবহন ভোগান্তি তুলনামূলক কম। একদম চাকার গাড়িতে চেপে চলে যাওয়া যাবে গন্তব্য অবধি। তো সঙ্গীকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন—পাহাড়ে নাকি সমুদ্রে?
এসইউ/এমএস