ফিচার

গাছের কাণ্ডে জমে থাকা পানিই ভরসা যে দেশের মানুষের

এই গাছটিকে বলা হয় ট্রি অব লাইফ। আসল নাম অ্যাডানসোনিয়া ডিজিটাটা, যাকে সাধারণত আফ্রিকান বাবোবাব গাছ বলা হয়। এটি একটি বিখ্যাত গাছ যা আফ্রিকার উপ-সাহারান অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি তার অস্বাভাবিক আকার, দীর্ঘায়ু এবং পরিবেশগত অভিযোজনের জন্য পরিচিত।

Advertisement

গাছটি ৩-৪ হাজার বছর পর্যন্ত শুষ্ক আবহাওয়াও বেঁচে থাকতে পারে। নিজের কাণ্ডে অনায়াসে লক্ষাধিক লিটার পানি ধরে রাখতে পারে। গাছটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাডানসোনিয়া ডিজিটাটার কাণ্ড সাধারণত মোটা এবং বোতলের মতো আকার ধারণ করে। গাছটি তার কাণ্ডে প্রচুর পানি জমা রাখতে পারে, যা শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহৃত হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক বাবোবাব গাছের কাণ্ডে ১ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার লিটার পর্যন্ত পানি জমা থাকতে পারে। গাছটি এ ধরনের অভিযোজনের মাধ্যমে শুষ্ক পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম।

এটি মৌসুমি পাতা ঝরায় এবং শুষ্ক মৌসুমে পাতা ঝরানোর মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করে। গাছটি বড়, সাদা এবং সুগন্ধি ফুল ফোটায়, যা রাতে পরাগায়নের জন্য বাদুড়ের উপর নির্ভর করে।

Advertisement

অ্যাডানসোনিয়া ডিজিটাটার ফল লম্বা, ডিম্বাকৃতির এবং শক্ত খোসাযুক্ত। ফলের ভেতরে থাকা পাল্প পুষ্টিতে ভরপুর এবং এটি বানান ফল নামে পরিচিত। এতে প্রচুর ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা স্থানীয় খাদ্য ও ওষুধে ব্যবহৃত হয়।

অ্যাডানসোনিয়া ডিজিটাটা গাছটি মাটির গভীর স্তর থেকে পানি শোষণ করতে পারে। এছাড়াও কাণ্ডে জমে থাকা পানি স্থানীয়রা কেটে বের করে পান করতে পারে। এই গাছের কাঠ তুলনামূলকভাবে নরম এবং স্পঞ্জের মতো, যা পানিকে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। এটি শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে একটি টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য ব্যবস্থা।

বাবোবাব গাছটি অনেক প্রাণীর জন্য আশ্রয়স্থল। পাখি, বাদুড় এবং কীটপতঙ্গ এই গাছের উপর নির্ভরশীল। গাছটি মাটির উর্বরতা বজায় রাখে এবং ক্ষয় রোধে সাহায্য করে। গাছের বিভিন্ন অংশ খাদ্য, ওষুধ, কাপড় এবং পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যাডানসোনিয়া ডিজিটাটা গাছের কাণ্ডে জমে থাকা পানি সাধারণত আফ্রিকার শুষ্ক ও আধা-মরু অঞ্চলের মানুষেরা পান করে। এই গাছটি মূলত আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল, যা সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে বিস্তৃত এবং এর আশপাশের দেশগুলোতে বেশি পাওয়া যায়।

বিশেষ করে মালি, নাইজার, সুদান, সেনেগাল, তানজানিয়া, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, মাদাগাস্কার দেশের মানুষ বাবোবাব গাছের পানি করেন এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। মালির শুষ্ক অঞ্চলে খরার সময় মানুষ বাবোবাব গাছের ভেতরের পানি পান করে।

Advertisement

নাইজারের মরু অঞ্চলে বাবোবাব গাছ থেকে পানি সংগ্রহ করা একটি প্রচলিত প্রথা। সুদানে খরার সময় স্থানীয় জনগণ বাবোবাব গাছ কেটে তার ভেতরের পানি ব্যবহার করে। আবার সেনেগালে গ্রামীণ মানুষ এই গাছকে জীবনদাতা হিসেবে বিবেচনা করে এবং এর পানি ব্যবহার করে।

পূর্ব আফ্রিকার তানজানিয়া ও কেনিয়ার শুষ্ক এলাকায় বসবাসকারী মানুষও বাবোবাব গাছের পানি পান করে। এই দেশগুলোর গ্রামীণ অঞ্চলের লোকজনও খরার সময় এই গাছের ভেতরের পানি সংগ্রহ করে। শুধু মানুষ নয় অনেক পশু পাখিরও পানির উৎস এই গাছ। এছাড়া বিশাল আকৃতির হওয়ায় এই গাছের ভেতর মানুষ ঘর বানিয়ে বসবাসও করে।

আরও পড়ুন ঐতিহ্যের টানে ৪০০ বছরের পুরোনো সানোড়ার মেলায়  ক্যামেরার ফ্রেমে জীবনের গল্প বলেন নাহিদ 

কেএসকে/জিকেএস