মুহাম্মদ শফিকুর রহমানডলফিন, যেটা আমাদের কাছে শুশুক নামে পরিচিত। খুব শান্ত, নিরীহ, বুদ্বিমান প্রাণি। মিঠা পানির প্রাণিটিকে নদীতে বেশি দেখা যায়। সেখানে মাছের পরিমাণও বেশি থাকে। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে ডলফিনের প্রিয় খাবার মাছ। যাদের বাড়ির কাছাকাছি নদী আছে। তারা এই প্রাণীটিকে হয়তো সরাসরি দেখেছেন। টুপ করে মাথা জাগিয়ে শ্বাস নিয়ে আবার ডুব মারে।
Advertisement
ডলফিন শ্বাস নেওয়ার জন্য ৩ থেকে ৪ মিনিট পরপর পানির উপরে মুখ উপরে তুলে শ্বাস নেয় এবং শ্বাস ছাড়ে। ডলফিনের ব্রেনের একটা অংশ শ্বাস নেওয়ার কাজ করে এবং অন্য অংশ ঘুমের সময় হলে ঘুমায়। এরা সাধারণত গভীর পানিতে থাকে। তবে কিছু কিছু সময় ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর পানিতে চলে আসে। ডলফিন লম্বায় ১০ ফুট পর্যন্ত হয়।
মজার ব্যাপার হলো, ডলফিনরা পানিতে বাস করলেও এরা স্তন্যপায়ী। সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে ও বাচ্চা লালনপালন করে। প্রায় নয় মাস পরপর বাচ্চা দেয়। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঘুমায়। বলা যায় দিন-রাতের প্রায় সারাক্ষণই তারা সজাগ থাকে। মজার বিষয় হলো ঘুমালেও এদের শরীর সচল থাকে। মস্তিকের অর্ধেকটা অংশ বিশ্রাম নেয়। ডলফিন বা শুশুকেরা দলবদ্ধভাবে খাবার ধরার চেষ্টা করে এবং দলের একে অপরকে বন্ধুর মতো সহযোগিতা করে।
সুইডিশ জীববিজ্ঞানী লিনিয়াস প্রথম ডলফিনদের স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেন। ডলফিন আমাদের অনেক উপকার করে। যেমন-এরা অসুস্থ মাছ খায়। যা পানির জীববৈচিত্র্যকে স্বাস্থ্যকর রাখে। ডলফিন আমাদের পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। জলজ বাস্তুসংস্থানের স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে এই প্রজাতির ওপর। অবশ্য মাছ ছাড়া কাকড়াও এদের পছন্দের খাবার।
Advertisement
ডলফিনের চোখ আমাদের মত এত কার্যকর নয়। চোখ এদের তেমন কাজ করে না। এরা শব্দের উপর নির্ভর করে চলে। ফলে নদীতে কোথায় জাল পাতা আছে। যা বুঝেই উঠতে পারে না। এই সুযোগে দুষ্ট জেলেরা ডলফিন শিকারে মেতে উঠে।
সারাবিশ্বে মিঠা পানির ডলফিনের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে সুন্দরবন, কর্ণফুলী, সাঙ্গু, রূপসা, সুরমা, হালদা, সন্ধ্যা সহ অনান্য নদীতে প্রায় ১৩৫২টি ডলফিন আছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগের বেশি ডলফিন আমাদের দেশে। বিষয়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই নিরীহ প্রাণীটি দুটি কারণে আমাদের দেশে ভালো নেই। একটা জেলেদের কারেন্ট জাল আরেকটা দূষিত পানি। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে যত শুশুক মারা যায়, তার ৭৯ ভাগই নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে আটকা পড়ে। এদের সাধারণত ১৬০ থেকে ২০০টি ধারালো দাঁত থাকে। বেশিরভাগ ডলফিনের পিঠ কালো এবং বুক সাদা। শুশুকের ঠোঁট লম্বা আর মাড়িতে দাঁতের কারণে সহজেই কারেন্ট জালে আটকা পড়ে। আর এই আটকে পড়া শুশুক পানির ওপরে উঠে শ্বাস নিতে না পারার কারণে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা পড়ে।
বাংলাদেশে সাত জাতের ডলফিন দেখা যায়। প্রতি বছর ২৪ অক্টোবর আন্তজাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস পালন করা হয়। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নদীর প্রাণ ডলফিন-শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক’ ।
Advertisement
লেখক: এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশনস,ফেয়ার ডিষ্টিবিউশন লিমিটেড
কেএসকে/জেআইএম