বিদেশে অর্থপাচারকারীদের বাড়ি এবং সম্পদের বিষয়ে তথ্য দিতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
Advertisement
তিনি বলেন, আমাদের দেশে দিনে-দুপুরে এমনভাবে চুরি হয়েছে যা বিশ্বের আর কোথাও হয়নি। শুধু চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপই (এস আলম) ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ শীর্ষক কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমরা টাস্কফোর্স গঠন করেছি, সেখানে বিদেশিরাও কাজ করছেন। পাচারকারীদের অর্থ দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ফিরিয়ে আনবো। বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করবো, দেশের বাইরের আদালতেও আমাদের জিততে হবে। এক্ষেত্রে যদি প্রবাসীরা পাচারকারীদের সম্পদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন তাহলে অনুসন্ধানে সুবিধা হবে, অর্থ ফিরিয়ে আনা আরও সহজ হবে আমাদের জন্য।
Advertisement
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স আয়ের অন্যতম দেশ সৌদি আরবের পুরো রেমিট্যান্স এখন সরাসরি বাংলাদেশে আসছে না। দেশটি থেকে দুবাই হয়ে তারপর বাংলাদেশে আসছে। একটি অসাধু চক্র সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কিনে মজুত করছে। সেই চক্রটি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে উচ্চমূল্যে ডলার বিক্রি করছে। সেখানে (দুবাই) বসেই এ দেশের ডলার বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, দায় পরিশোধের চাপে দুবাই থেকে ডলারের বাজার অস্থিতিশীল করা চক্রটির কাছ থেকে ডলার কিনতে অনেক সময় ব্যাংকগুলো উচ্চমূল্য দিতেও রাজি হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আপনারা (ব্যাংক) এ কাজটি করবেন না। বড় কোনো দায় পরিশোধের প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসুন, ডলারের ব্যবস্থা করে দেবো। তারপরও বিদেশি কোনো চক্রের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে ডলার কিনবেন না, দেশের স্বার্থে এটা করুন। দেশকে ভালোবেসে করুন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপনাদের সঙ্গে আছে।
গভর্নর আরও বলেন, ব্যাংকগুলো সাতদিন ডলার না কিনলে ওরা সোজা হয়ে যাবে, আপনারা প্যানিকড (আতঙ্কিত) হবেন না। আমাদের হাতে চার মাসেরও বেশি আমাদনি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, একতাবদ্ধ থাকুন। আমদানি দায় পরিশোধের জন্য একটি ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত ডলার ছিল না, তারা বাধ্য হয়ে একই উৎস থেকে ৭ টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনেছে। সেই সংকট এখন সমাধান হয়ে গেছে। বড় কোনো পেমেন্টের চাপ থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসুন, ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের সমস্যা অনেক তবে সামর্থ্য কম। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। আমাদের সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও বেড়েছে। তবে সবক্ষেত্রে দেশের ইমেজ পজিটিভ নয়, নেগেটিভও আছে। গত চার-পাঁচ মাসে এ দেশের ইমেজে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এর একটি প্রভাব জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে পড়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার বিরুদ্ধেও তারা (ভারত) প্রচারণা চালাচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুত রাজনৈতিক রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, এতে ইমেজ সংকট কেটে যাবে। তখন বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে।
Advertisement
ইএআর/কেএসআর/এএসএম