ফিচার

সবচেয়ে কম বয়সে যাকে ফাঁসি দেওয়া হয়!

নেটিভ আমেরিকান জেমস আরসিনের বয়স তখন সবে ১০ বছর। ১৮৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হয় তার। শিশুটিই পৃথিবীর সবচেয়ে কম বয়সে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। মার্কিন ফেডারেল সরকার তার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

Advertisement

উইলিয়াম পার্কমিল নামের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও আরসিন মিলে ছিনতাই করতে গিয়ে খুন করে ফেলেন এক ব্যক্তিকে। মৃত ব্যক্তি ছিলেন উইলিয়াম ফিগেল নামের একজন সুইডিশ নাগরিক। তিনি ফোর্ট গিবসনের আশেপাশের এক দোকানে কেনাকাটা করছিলেন। এমন সময় তার দিকে চোখ পড়ে আরসিন ও তার সহযোগীর।

সুইডিশ ওই নাগরিক কেনাকাটার পর যখন বাড়ি ফিরছিলেন; তখন নির্জন এক রাস্তায় হঠাৎ করেই আক্রমণ করে বসেন আরসিন ও তার সহযোগী। ঘটনার সময় নিহত ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরসিন তার মাথায় ৬ বার ইট দিয়ে আঘাত করে। এতে ওই ব্যক্তির চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমায় ঘটেছিল।

এরপর আরসিন ও উইলিয়াম মিলে ডাকাতি করে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে কয়েকজন ব্যক্তি ঘটনাটি দেখে ফেলেন। অবশেষে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। ধরা পড়ে যান উইলিয়াম ও আরসিন। তবে দুঃখের বিষয় হলো, খুন ও ডাকাতি করে তারা মাত্র ২৫ সেন্ট পেয়েছিলেন মৃত ফিগেলের কাছ থেকে।

Advertisement

এরপর আর্সিনকে গ্রেফতার করা হয় ডাকাতি ও খুনের অপরাধে। তার সহযোগী উলিয়ামকেও গ্রেফতার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আর্সিনের বয়স যেহেতু ১০ বছর ছিল; তাই তাকে তখন মৃত্যুদণ্ড দেয়নি সরকার। বিচারক সিদ্ধান্ত দেন, টানা ১৩ বছর কারাদণ্ডের পর ২৩ বছর বয়সে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। যথারীতি তা-ই হয়েছিল। এক দশক ধরে এ মামলা নিষ্পত্তিহীন ছিল।

যদিও জেমস আরসিনের বয়স সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত হতে পারেননি। কারণ আরসিন একজন নেটিভ আমেরিকান ছিলেন। ১৮৭০ ও ১৮৮০ এর দশকে আদমশুমারি রেকর্ড খুব কম ছিল। তাই আরসিনকে গ্রেফতার করার পর, সে তার বয়স সম্পর্কে যা বলেছিল; তা-ই গ্রহণযোগ্য হয়। তবে ১৪-১৫ বছরের উর্ধ্বে হবে না তার বয়স; সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন বিচারক।

শিশু অধিকার সংস্থা থেকে অনেকেই এ ঘটনার জের ধরে পরবর্তীতে বলেছেন, তখনকার সময় সাদা আর কালো চামড়ার মধ্যে ব্যবধান ছিল অনেক। শিশু আরসিন হয়তো অপরাধ করেছিল ঠিকই, তবে তাকে দীর্ঘদিন কারাদণ্ড দিয়ে ভালো পথে ফেরানো যেত।

তখনকার বিচারকরা সামান্য অপরাধ হলেও নেটিভ আমেরিকান, আফ্রিকানদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করতেন। যা ছিল অন্যায্য বিচার।

Advertisement

২০০৫ সালের মার্চ মাসে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট ‘রোপার বনাম সিমন্স’মামলার জের ধরে ঘোষণা দেয়, মার্কিন মুলুকে ১৮ বছরের কম বয়সী অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

মার্ডারপিডিয়া/জেএমএস/এসইউ/জিকেএস