দেশজুড়ে

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৩ হাজার পুকুরের মাছ

নেত্রকোনায় নতুন করে আরও এলাকা কিছু প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে সাতটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলার মধ্যে সড়ক, ঘরবাড়ি, পুকুর-মৎস্য খামার, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে। নতুন করে আটপাড়া উপজেলার লুনেশ্বর, সদর ইউনিয়নসহ উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া বন্যায় কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, পূর্বধলা, মোহনগঞ্জ ও সদর উপজেলায় নতুন করে বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বন্যায় সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলাতে।

এর মধ্যে কলমাকান্দার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। পানিবন্দি মানুষ গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত প্রাণি নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। বন্যাকবলিত এসব এলাকায় কয়েক হাজার পুকুর ও মাছের খামার ডুবে মাছ পানিতে ভেসে গেছে। স্থানীয় বেশ কিছু গ্রামীণ বাজার এখনো পানির নিচে রয়েছে। কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় অন্তত ৩৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। বেশির ভাগ পানি ঢুকেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। জেলায় ১ হাজার ৩১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

Advertisement

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ সোমবার বিকেলে বলেন, সারা জেলায় ২৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় ১৫২টি, বারহাট্টায় ৭৫টি ও দুর্গাপুরে ৩৭টি রয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষ ও যোগাযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাকিরুুল ইসলাম বলেন, কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা সড়কের চার কিলোমিটার পথের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ওই সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্গাপুর-বিজয়পুর সড়কের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় ১৫ মিটার নতুন পথ, শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের ২০ মিটারের মতো অ্যাপ্রোচ সড়কসহ ওই সড়কের ইন্দ্রপুর এলাকায় একটি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, অবিরত বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে সাতটি উপজেলায় দুই হাজার ৯৬৩টি পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে করে প্রায় ১ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে তাদরকে সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, সোমশ্বরী ও ধনু নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কিছুটা নিচে থাকলেও কংস ও উব্দাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।

Advertisement

নেত্রকোনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া আছে। একই সঙ্গে বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১১০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

কামাল হোসাইন/এএম/এমএস