বিশ্বখ্যাত ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহি এবার দক্ষিণ কোরিয়ার ৩০তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি ‘এশিয়ান ফিল্মমেকার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এই সম্মাননা তাকে এনে দিল এশীয় চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং স্বাধীন কণ্ঠ হিসেবে তার নির্বিচার লড়াইয়ের স্বীকৃতি।
Advertisement
সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ ছবির জন্য পানাহি জয় করেন সর্বোচ্চ পুরস্কার পাল্ম দ’অর। এটি তাকে প্রথম এশীয় নির্মাতা হিসেবে কান, ভেনিস ও বার্লিন- এই তিনটি প্রধান ইউরোপীয় উৎসবের সর্বোচ্চ সম্মানজয়ী হিসেবে ইতিহাসে স্থাপন করেছে।
এর আগে ২০০২ সালে তিনি ‘দ্য সার্কেল’ ছবির জন্য ভেনিসের গোল্ডেন লায়ন এবং ২০১৫ সালে ‘ট্যাক্সি’ ছবির জন্য বার্লিন উৎসবে গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন।
তার এই অর্জনের পেছনের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো, ইরানে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞার মাঝেও তিনি গোপনে চলচ্চিত্র নির্মাণ চালিয়ে গেছেন। ৬৫ বছর বয়সী এই পরিচালক চলচ্চিত্র নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা, বহুবার গ্রেফতার, বিচারবিহীন আটক, এমনকি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মুখেও থেমে যাননি। বরং সাহসের সঙ্গে তাঁর চলচ্চিত্র পৌঁছে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক উৎসবমঞ্চে।
Advertisement
পুরস্কার গ্রহণ করে পানাহি বলেন, ‘এই স্বীকৃতি মনে করিয়ে দেয় সিনেমা এখনও ভাষা, সীমান্ত আর নিপীড়নের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাদের এক করতে পারে। আমি এই পুরস্কার শুধু আমার জন্য নয়, তাদের জন্য গ্রহণ করছি যারা নীরবে, নির্বাসনে বা চাপে থেকেও সৃষ্টির পথ ছাড়েননি।’
১৯৯৫ সালে ‘হোয়াইট বেলুন’ দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাত্রা শুরু করা পানাহি ওই ছবির জন্য কান উৎসবে ক্যামেরা দ’অর পুরস্কার জিতেছিলেন। তারপর থেকে তিনি একের পর এক সাহসী সিনেমার মাধ্যমে ইরানি সমাজে ব্যক্তি স্বাধীনতা, প্রতিবাদ, ও প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠ তুলে ধরেছেন।
তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সম্মাননার মধ্যে রয়েছে লোকার্নো উৎসবে ‘দ্য মিরর’ ছবির জন্য গোল্ডেন লেপার্ড (১৯৯৭) এবং কান উৎসবে ‘থ্রি ফেসেস’ ছবির জন্য চিত্রনাট্য পুরস্কার (২০১৮)।
বাসান চলচ্চিত্র উৎসবের এই পুরস্কারটি প্রতিবছর তাঁদের দেওয়া হয়, যারা এশিয়ার চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতির বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখেন। জাফর পানাহি আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বাসান উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
Advertisement
উল্লেখ্য, ৩০তম বাসান চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ১৭ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেখানে এশিয়ান কনটেন্টস অ্যান্ড ফিল্ম মার্কেট অনুষ্ঠিত হবে ২০ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর। এতে এ বছরের এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে নির্বাচিত হয়েছে ৩০টি সিনেমা। যার মধ্যে বাংলাদেশের সিনেমা রয়েছে ২টি। তালিকায় আছে বিপ্লব সরকারের ‘দ্য ম্যাজিকাল মেন’ ও মির্জা শবনম ফেরদৌসির ‘দ্য সাইলেন্স অব দ্য লুমস’। দ্য ম্যাজিকাল মেনের প্রযোজক হিসেবে বিপ্লব সরকারসহ যুক্ত আছেন চার দেশের চারজন প্রযোজক। আর দ্য সাইলেন্স অব দ্য লুমস সিনেমাটি প্রযোজনা করছেন বাংলাদেশের প্রযোজক রাজিব মহাজন।
এলআইএ/এএসএম