স্বাস্থ্য

মায়ের দেয়া লিভারে নতুন জীবনের স্বপ্ন ছেলের

‘মায়ের চেয়ে আপন কেহ নাই।’ গর্ভধারিণী মায়েরা সন্তানের মঙ্গল কামনায় নিজের জীবনটাও বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। সন্তান অসুস্থ হলে মায়েরা সন্তানের শয্যা পাশে বসে বিনিদ্র রাত কাটান। কোন চিকিৎসকের কাছে গেলে সন্তান সুস্থ হয়ে উঠবে তা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। সন্তানের কঠিন কোনো অসুখ হলে তো নাওয়া-খাওয়া হারাম হয়ে যায়। নিজের জীবনের বিনিময়ে সন্তান বেঁচে থাকুক এমন দোয়া করেন আল্লাহর কাছে।

Advertisement

রিজিয়া খাতুন (ছদ্মনাম)। বয়স ৪৭। তার ২০ বছর বয়সী ছেলে পেশায় পেশকার। পাঁচ বছর ধরে পেটের পীড়ায় ভুগছেন। হঠাৎ একদিন পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি হয় ছেলেটি। তার রক্তবমি ও রক্ত পায়খানা হয়। পরীক্ষায় জন্ডিসও ধরা পড়ে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার একপর্যায়ে লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে।

এ খবরে ভেঙে পড়েন রিজিয়া খাতুন। আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলেও চিকিৎসার জন্য ছেলেকে ভারতে নিয়ে যান রিজিয়া খাতুন। চিকিৎসকরা জানান, লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে তার ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে। চিকিৎসকের কণ্ঠে এমন কথা শুনে মুহূর্তের জন্য খুশি হলেও যখন শোনেন অস্ত্রোপচার করতে এক কোটি টাকা লাগবে তখনই তার খুশি উবে যায়। আশাহত হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

দেশে ফিরে এসে শুনতে পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারির নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী খান তাকে বলেন, ছেলের জন্য লিভারের অংশ দানে রাজি আছেন কি না? রাজি থাকলে তার লিভারের অংশ নিয়ে ছেলের লিভারে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হবে। এ কথা শোনামাত্র বিনা বাক্যে রাজি হয়ে যান রিজিয়া খাতুন। শুনতে কল্পকাহিনির মতো মনে হলেও ঘটনাটি সত্য।

Advertisement

গত ১৫ জুন ২০ বছর বয়সী ছেলেকে হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। ৬০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল সোমবার প্রায় ১৮ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে মায়ের দেয়া লিভার ছেলের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন। বর্তমানে মা ও ছেলে পাশাপাশি বেডে নিউরোসার্জারি বিভাগের আইসিইউতে রয়েছেন।

মঙ্গলবার বিএসএমএমইউয়ের মিল্টন হলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অস্ত্রোপচারের পর মা ও ছেলের জ্ঞান ফিরেছে, কথা বলেছে। তারা আরও সাতদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন বলে জানান অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী খান।

এমইউ/বিএ/জেআইএম

Advertisement