নিয়ামুর রশিদ শিহাব
Advertisement
প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গেছে এক সময়ের চিরচেনা সেই শকুন। এক সময় সর্বত্র শকুন দেখা যেত। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি নানান কারণে প্রাকৃতিক সুইপার খ্যাত শকুন আজ বিলুপ্তপ্রায়।
বন্য প্রাণী ও পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুনের জাত রক্ষা করা না গেলে কয়েক বছরের মধ্যে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে শকুন। বাস্তবে নয় তখন বইয়ে ছবি দেখে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চেনাতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কোনোভাবে টিকে আছে সরু ঠোঁট প্রজাতির শকুন।
শকুন মৃত পশু-পাখি খেয়ে পরিবেশ দূষণ কমায়। একই সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়ানোর হাত থেকেও পরিবেশকে রক্ষা করে। এ কারণে শকুনকে বলা হয় ‘প্রকৃতির সুইপার’। গোটা পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির শকুন থাকলেও বাংলাদেশে দেখা যায় মাত্র সাত প্রজাতি। বর্তমানে তাও বিলুপ্ত প্রায়।
Advertisement
জানা গেছে, ৮০’র দশকে পটুয়াখালী জেলা ও গলাচিপা উপজেলাসহ দক্ষিনাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকাগুলোর নদ-নদীর চরে দল বেঁধে ঘুরত শকুনের ঝাঁক। এছাড়া ১৯৭১ সালের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নদে ভেসে আসা লাশের ওপর বসত ধূসর শকুন। গরু মহালের আকাশে ছায়া ফেলে চক্কর দিত শকুন-শকুনিরা।
শকুন অশুভ তো নয়ই, হিংস্রও নয়। চিল, ঈগল বা বাজপাখির মতো শিকারিও নয়। এটা আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু। মৃত পশু খেয়ে শকুন আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। শকুন কখনোই জীবিত মানুষকে আক্রমণ করে না।
প্রখর দৃষ্টিশক্তির অধিকারী পাখিটি বটগাছ, কড়ইগাছ, শিমুল, বাঁশঝাড়, দেবদারু গাছে বাসা বানাত। এদের দৃষ্টি এতটাই প্রখর যে, অনেক উঁচু থেকেও এরা মাটি বা পানির ওপরে থাকা খাবার দেখতে পায়। এ পাখি একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০টি ডিম পাড়ে। তিন সপ্তাহ তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফোটে। এর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২৫ বছর। তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার হয় একেকটি পাখি। কিন্তু প্রকৃতিক বিপর্যয়ে ক্রমাগত কমছে শকুনের সংখ্যা। সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত শকুন হ্রাসের পরিমাণ প্রায় ৯৮ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত পশুর মাংস শকুনের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু ডাইক্লোফেনাক দেওয়া হয়েছে এমন মৃত পশুর মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে। এ কারণে গত তিন দশকে উপমহাদেশে ৯৭ শতাংশ শকুন মারা গেছে।
Advertisement
বর্তমানে শকুন বিলুপ্তি প্রায়। যা আমাদের পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। শকুনকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এখনই যদি পরিবেশ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে প্রাকৃতিক সুইপার শকুন।
আরও পড়ুন মুক্তা চাষে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা ঋতুর সঙ্গে শরীরের রং বদলায় যে শিয়াললেখক: ফিচার লেখক
কেএসকে/জিকেএস