মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
Advertisement
বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো.আব্দুল্লাহ।
এবার মুসলমানদের সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস রমজানের ৩০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। হিজরি রমজান শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলমানরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকেন।
মাগরিবের পর থেকেই জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বিভিন্ন জেলায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের নিয়ে চাঁদ দেখা কমিটি ফাউন্ডেশনের দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের ফোন করে চাঁদ দেখার সংবাদ জানাতে থাকেন।
Advertisement
৬৪ জেলা থেকেই চাঁদ না দেখার সংবাদ জানানো হয়। এরপর জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনা করেন। এজন্য চাঁদ দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছিল।
এরপর রাত পৌনে ৯টার দিকে চাঁদ না দেখা যাওয়ায় ঈদ উদযাপনের তারিখ ঘোষণা করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন চাঁদ দেখার ঘোষণা মাগরিবের নামাজের পরপরই হওয়ার কথা। আমরা এ ব্যাপারে এখানে বসে ছিলাম। চাঁদ দেখা কমিটির নামে একটি সুনির্দিষ্ট কমিটি আগে থেকেই গঠিত আছে। দেশের ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের সম্পৃক্ত করে এই কমিটিটাকে আমরা আরও সুদৃঢ় করেছি। আজকে আমরা তাদের সমন্বয়ে এতক্ষণ ধরে বসে ছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় আমরা খোঁজ-খবর নিয়েছি। আমাদের কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে চাঁদ দেখার সংবাদটি সুন্দর ও সঠিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, ওলামায়ে হযরতদের বলেছি এই বিষয়টি আমাদের সরকারের বিষয় নয়। বিষয়টি হলো আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল এবং কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক যেভাবে করা উচিত আমরা ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে কথা বলে সেভাবেই করেছি। এজন্য আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ওলামায়ে কেরাম ও পীর মাশায়েখদের সঙ্গে কথা বলেছি যেমন- চরমোনাই হুজুর, হাটহাজারী হুজুর ও অন্যান্য বড় বড় আলেম ওলামারা আমি যাদের নাম বলতে চাই না।
Advertisement
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি আপনারা আপনাদের খোঁজ-খবর নিয়ে বলেন। বড় বড় মাদরাসা তাদের বড় বড় মুফতিদের নিয়ে বসেছেন, মিটিং করেছেন। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কমিটির পক্ষ থেকে আমরাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা এ কথাই বলেছি বর্তমান অবস্থায় আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে না পারায় সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে দেরি হচ্ছে।
‘তবে আমরা সব জায়গায় সকলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে... সকল আলেম ওলামারা খ্যাতনামা মুফতিরা রয়েছেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা এই ঘোষণা (ঈদ উদযাপনের) পাঠ করেছি।’
শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ যদি এটাকে অন্যভাবে ভুল বুঝতে চাওয়ার চেষ্টা করেন, আমি সেই ধর্মপ্রাণ ভাইদের বলব কোরআন এবং হাদিস অনুযায়ী শরীয়ত অনুযায়ী আমাদের দেশের যেসব ওলামায়ে কেরাম রয়েছেন আপনারা তাদের সঙ্গে আলাপ করে কথাবার্তা বলবেন। সভায় ধর্মসচিব মো. আনিছুর রহমান, ওয়াকফ প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত প্রধান তথ্য অফিসার ফায়জুল হক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলাম, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আলমগীর, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহ মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ নিয়ামতুল্লাহ ও চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মাওলানা শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকার লালবাগ মাদরাসার প্রধান মুফতি মাওলানা ইয়াহহিয়া, তেজগাঁও মদীনাতুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক আল আযহারী ও মোহাম্মদপুর জামেয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মুফতি মো. মাহফুজুল হক।
দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর দেশের মুসলমানদের এখন ঈদের আনন্দে মেতে উঠার অপেক্ষা। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদের জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের দিন সকালে ঈদগাহ বা মসজিদে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়বেন মুসল্লিরা।
গ্রামের বাড়িতে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রেল, সড়ক ও নৌপথে রাজধানী ছেড়েছেন অসংখ্য মানুষ। ইতোমধ্যে রাজধানী ফাঁকা হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার থেকেই সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার (৫ ও ৬ জুন) ঈদের ছুটি থাকবে।
শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। এদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মঙ্গলবার চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, শরিয়তপুর, কুমিল্লা, মাদারীপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলাসহ দেশের কয়েকটি জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।
আরএমএম/জেএইচ/এমএস