বিশেষ প্রতিবেদন

তালিকা প্রস্তুত, নির্দেশ এলেই এমপিওভুক্তি

শিক্ষকদের দাবির মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত আগস্টে এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন গ্রহণ করে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা আটকে যায়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিন যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়ে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাগ্য।

Advertisement

ছয় মাস পার হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর এমপিওভুক্তির মুখ দেখেনি। তবে ওপর মহলের নির্দেশ এলেই এমপিওভুক্তিকরণ শুরু হবে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন >> নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি গ্রেডিং পদ্ধতিতে

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষক অসন্তোষের আশঙ্কায় তখন এমপিওভুক্তির কাজ কৌশলে পিছিয়ে দেয়া হয়। কারণ আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, শর্তপূরণ করেছে মাত্র দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১২শ স্কুল-কলেজ, পাঁচশ মাদরাসা এবং সাড়ে তিনশ কারিগরি প্রতিষ্ঠান।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছিল প্রায় সাড়ে নয় হাজার প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনের আগে সাড়ে সাত হাজার প্রতিষ্ঠান বাদ পড়লে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে- এমন আশঙ্কায় সেসময় কোনো ঝুঁকিতে যায়নি সরকার। তাই ঝুলে যায় এমপিওভুক্তির কাজ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আলাদা তালিকা করে দুই বিভাগে যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এখন সরকারি সিদ্ধান্ত হলেই এমপিওভুক্তির পরিপত্র জারি হবে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া আবেদনের ওপর কাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসবে। এটা চলতি অর্থবছরেই হতে পারে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্র জানায়, আবেদন করা সাড়ে নয় হাজার এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি করতে বছরে দরকার অন্তত ২২শ কোটি টাকা। অপরদিকে স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তির খাতে আছে মাত্র ৪৩২ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে এর পরিমাণ আট কোটি। এ টাকায় সর্বোচ্চ দুই হাজার প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া সম্ভব। এমন অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে মন্ত্রণালয়।

Advertisement

বর্তমানে এমপিওভুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ১৮০। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫ এবং মাদরাসা সাত হাজার ৬১৮। এ খাতে সরকারের ব্যয়ে বরাদ্দ আছে বছরে ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। এমপিও খাতের এ ব্যয় বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের ৬৩ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিণয় ভূষণ রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা থেকে আবেদন নেয়া হয়েছে। আমরা জেনেছি, মন্ত্রণালয় থেকে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহলে দৌড়াদৌড়ি করে আমরা আরও জানতে পেরেছি যে, নির্বাচনের কারণে আমাদের কার্যক্রম স্থগিত ছিল। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আপনাদের দাবি পূরণ করা হবে।’

আরও পড়ুন >> এমপিওভুক্তির জন্য ৬৪১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদন

‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আমাদের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল। এ কারণে তাদের পক্ষে আমরা সবাই (শিক্ষক-কর্মচারী) মিলে কাজ করেছি।’

বিণয় ভূষণ রায় বলেন, ‘নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে জানুয়ারিতে আমাদের নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করেন। শিক্ষামন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেন যে, আমাদের দাবি বাস্তবায়নে তিনি কাজ করবেন।’

‘এরপর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি যে, এমপিওভুক্তি কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি নেই। তাই চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে আমরা আবারও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করব এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি জানার চেষ্টা করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করতে হবে। এ সুবিধা থেকে কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে এমপিও সুবিধা পরে দিক, কিন্তু কাউকে এ সুবিধার বাইরে রাখা যাবে না। অযোগ্য বলে কাউকে দেয়া হবে না- এ নীতি থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।’ ‘সব প্রতিষ্ঠানেরই এমপিওভুক্তির যোগ্যতা রয়েছে, তাই অযোগ্য বলে কাউকে বাতিল করা যাবে না। যদি আমাদের এ দাবি মেনে নেয়া না হয় তাহলে কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে সরকারকে অখুশি করে নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এমএইচএম/এমএআর/এসএইচএস/এমকেএইচ