বিশেষ প্রতিবেদন

দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন যথার্থ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রকাশিত বাংলাদেশের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন ‘যথার্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে, তা অন্য গবেষণাতেও উঠে এসেছে।

Advertisement

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘লোক দেখানো নয়, সত্যিকার অ্যাকশন হোক দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কারণ দুর্নীতির শিকড় যে সর্বত্রই, তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।’

আরও পড়ুন >> উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিচার কম হচ্ছে : টিআইবিবিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৩তম বলে জানিয়েছে বার্লিনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ২৬ স্কোর পেয়ে আগের বছরের (২০১৭) তুলনায় চার ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। ২০১৭ সালে বিশ্বের দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম। ২০১৬ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম এবং ২০১৫ সালে ছিল ১৫তম।

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস ভবনে নিজেদের কার্যালয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

Advertisement

টিআইবির প্রতিবেদন এবং দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের কাছে। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, টিআই’র প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। গবেষণার ত্রুটিও থাকতে পারে। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে বাংলাদেশে দুর্নীতি যে বেড়ে চলছে, তা তো অস্বীকার করা যায় না। বিশ্বব্যাংকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানেও দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ কারণে বিতর্ক তৈরি না করে আমাদের মূলে যাওয়া দরকার।’

আরও পড়ুন >> ‘টিআইবি দুর্বল, আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন’তিনি বলেন, ‘সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কথা বলছে। সরকারপ্রধানও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন দৃশ্যমান অ্যাকশনে যাচ্ছে। ভালো কথা। তবে সেটা যেন লোক দেখানো না হয়। আমরা এমন অভিযান আগেও দেখেছি। সত্যিকার অর্থে তা কোনো কাজে আসেনি।’

প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুদক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ যারা সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে, তাদের সত্যিকার ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ বিবেচনায় নয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে পারলেই দুর্নীতি কমে আসবে বলে মনে করি।’

প্রসঙ্গত, বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রকাশ করা বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) ২০১৮-এর প্রতিবেদনে অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকার দেশ উগান্ডার পাশে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ২৬ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। একইভাবে ২৬ স্কোর পেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ১৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকও। ফলে আগের বছরের তুলনায় এবার আরও ৪ ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। অর্থাৎ বাংলাদেশে দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে।

Advertisement

২০১৭ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম। ২০১৫ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম। ২০১৬ সালে ছিল ১৫তম। ২০১৭ সালে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ১৭তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

১৮০টি দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী বাংলাশের অবস্থান ১৪৯তম। অথচ ২০১৭ সালে বাংলাদেশ এই হিসেবে ছিল ১৪৩তম। অর্থাৎ এখানেও ৬ ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের।

১৮০টি দেশের উপর টিআই এই জরিপ চালিয়েছে। জরিপে ০ থেকে ১০০ নম্বরের স্কেলে দেশগুলোকে নম্বর দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে কম নম্বর (১০ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে সোমালিয়া। তার পরেই রয়েছে (১৩ স্কোর) সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান। তৃতীয় অবস্থানে (১৪ স্কোর) রয়েছে ইয়েমেন ও উত্তর কোরিয়া। ১৮০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯ নম্বরে। এর আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৪৩ নম্বর অবস্থানে।

আরও পড়ুন >> বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে, এবার অবস্থান ১৩তমসবচেয়ে বেশি (৮৮ স্কোর) পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বিবেচিত হয়েছে ডেনমার্ক। কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এর পরেই রয়েছে (৮৭ স্কোর) নিউজিলন্যান্ড। তৃতীয় অবস্থানে (৮৫ স্কোর) রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুজারল্যান্ড।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান (১৬ স্কোর)। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতি ভুটানে (৬৮)। এই এলাকায় দুর্নীতির দিক থেকে আফগানিস্তানের পরই রয়েছে বাংলাদেশ।

এছাড়া স্কোর ৪১ নিয়ে ভারতের অবস্থান ৭৮ নম্বরে। পাকিস্তানের (স্কোর ৩৩) অবস্থান ১১৭, মালদ্বীপ ও নেপালের (স্কোর ৩১) অবস্থান ১২৪ এবং ৩৮ স্কোর নিয়ে ৮৯তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এএসএস/এমআরএম/বিএ