রাজনীতি

সংলাপ নিয়ে ধূম্রজাল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনের আগে সংলাপে অংশ নেয়া দল ও জোটগুলোকে নির্বাচন পরবর্তী ‘শুভেচ্ছা বিনিময়ের’ জন্য গণভবনে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এটা ‘সংলাপ’ না ‘শুভেচ্ছা বিনিময়’ তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাদানুবাদ চলছে।

Advertisement

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, সংলাপে বসলে তা হতে হবে শর্ত সাপেক্ষে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলছেন, সংলাপের বিষয়বস্তু কী তা আগে জান‌াতে হবে। আর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছেন- ‘সংলাপ’ আর সোমবার বললেন- ‘শুভেচ্ছা বিনিময়’। এসব নিয়ে বাক্যবিনিময় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।

গত ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিার্বচনে অংশ নেয়া ও নির্বাচনের আগে সংলাপ করা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী ‘শুভেচ্ছা বিনিময়’ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তার একদিন পরেই ওবায়দুল কাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে গণভবনে নির্বাচন পরবর্তী ‘সংলাপে ডাকার’ খবর দেন সাংবাদিকদের। এর একদিন বাদেই উল্টো খবর দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সোমবার তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো বিষয় ‘এখন নেই’। ‘কেবল শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য’ রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকা হবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নতুন নির্বাচনের পথ তৈরি করতে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিল সরকারকে। সে প্রেক্ষাপটে ওবায়দুল কাদের রোববার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘যেসব দল ও জোটের সাথে সংলাপ হয়েছিল, তাদেরকে আবার চিঠি দিয়ে সংলাপে ডাকবেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)।’

Advertisement

এবারের নির্বাচনের আগে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সেই সংলাপ ‘অর্থবহ হয়নি’ বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।

কাদেরের মুখে নতুন করে সংলাপের খবর শুনে তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার বলেন, আলোচনার বিষয়বস্তু জানা গেলে তারা এই আলোচনার প্রস্তাব বিবেচনা করবেন।

একইদিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় কাদের বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো বিষয় নেই। যেই নির্বাচন নিয়ে সারা বিশ্বের কোথাও কোনো সংশয় নেই, গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছে, কোনো বিতর্ক কোনো প্রশ্ন না করেই। সেখানে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন নিয়ে কোনো সংলাপ নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য চিঠি দিয়ে আবারও তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর সেটা শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য। এখানে কোনো সংলাপ নয়।’

Advertisement

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আবারও সংলাপে বসার আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তবে সংলাপে যোগ দেয়ার আগে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা তা জানতে চান তিনি।

ড. কামাল বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ডাকবেন সংলাপে, একটু তো ইঙ্গিত থাকবে- কী কী বিষয় নিয়ে এ সংলাপ। যদি সেটা আমাদের কাছে বিবেচনাযোগ্য হয় তখন আমরা এ ব্যাপারে কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেব।’

উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮ আসনে জয় পায়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৭, জাতীয় পার্টি ২২ ও জোটের অন্যান্য দল নয়টি আসনে জয় পায়। অন্যদিকে বিএনপি ছয়, গণফোরাম দুই ও স্বতন্ত্ররা তিন আসনে বিজয়ী হয়েছে।

নির্বাচনের শুরু থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতারা এ নির্বাচনকে ভোট চুরির নির্বাচন বলে অভিযোগ করে আসছেন। এমনকি এখন পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জয়ী সংসদ সদস্যরা শপথ নেননি।

এফএইচএস/এমবিআর/জেআইএম