আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এপিবিএনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য বরাদ্দ টাকা ছাড় দেয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেনাবাহিনী বাদে তাদের জন্য ইসির বাজেট চারশ’ ১০ কোটি টাকা ধরা হলেও এর পরিমাণও বাড়ছে। সেনাবাহিনীর জন্য হবে আলাদা বাজেটও। জানা গেছে, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডের জন্য বরাদ্দ টাকার অর্ধেক আগাম দিয়েছে কমিশন। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ২৭১ কোটি ৮৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশকে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানকে (র্যাব) ১০ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে এক কোটি ৫৬ লাখ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ৩৩ কোটি দুই লাখ ৪৩ হাজার, আনসার ও ভিডিপিকে ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
Advertisement
পুলিশের জন্য বরাদ্দ ৬৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার মধ্যে খোরাকিবাবদ ৩৬ কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, জ্বালানিবাবদ ১৩ কোটি ৩৫ লাখ, মনোহরি দ্রব্যাদিবাবদ তিন কোটি ২০ লাখ এবং আপ্যায়ন ব্যয় তিন কোটি এক লাখ ৩৭ হাজার, যানবাহন (ভাড়া ও মেরামত) বাবদ সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
বিজিবির জন্য আগাম ৩৩ কোটি দুই লাখ ৪৩ হাজার বরাদ্দের মধ্যে খোরাকি খাতে ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৫ হাজার, জ্বালানি খাতে তিন কোটি ৩৫ লাখ, মনোহরি ২১ লাখ ৩৩ হাজার, আপ্যায়ন ব্যয় ৩৩ লাখ ১৫ হাজার, যানবাহন ১৬ কোটি তিন লাখ ৭১ হাজার, ব্যবস্থাপনা ব্যয় এক কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
১০ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার টাকা র্যাবের জন্য আগাম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে খোরাকি খাতে তিন কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার, জ্বালানি খাতে তিন কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার, মনোহরি ৫০ লাখ, আপ্যায়ন ব্যয় ২৮ লাখ ৭৫ হাজার, যানবাহন খাতে দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
Advertisement
কোস্টগার্ডের জন্য আগাম এক কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে খোরাকি খাতে ২৫ লাখ, জ্বালানি খাতে ৮৪ লাখ, মনোহরি তিন লাখ, আপ্যায়ন ব্যয় দুই লাখ, যানবাহনের জন্য ৪২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
আনসার ও ভিডিপির জন্য বরাদ্দ ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে খোরাকি বাবদ ১৪১ কোটি ৩৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা, জ্বালানিবাবদ ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার, মনোহরি দ্রব্যাদিবাবদ চার কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আপ্যায়ন ব্যয় ১২ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানায়, এর আগের সংসদ নির্বাচনে পুলিশ চারদিন থাকলেও এবার সাত দিন থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনের সময়ে থাকবেন চারদিন, মোতায়েনের আগে দুইদিন ও প্রত্যাগমনের জন্য একদিন- মোট সাত দিন ধরে ৪২৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে কমিশনের প্রাথমিক বাজেটে ১২০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে এ বাহিনীর জন্য বরাদ্দ দেড়শ কোটি টাকার কিছু বেশি রাখার সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচনে এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭জন পুলিশ মোতায়েন থাকবেন। এর মধ্যে এসপি থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা ৩৪৯ জন রয়েছেন। পুলিশের জন্য বরাদ্দ টাকার অর্ধেক নির্বাচনের আগে ও বাকি অর্ধেক টাকা নির্বাচনের পরে দেয়া হবে।
আর আনসার সদস্যদের জন্য প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা দেয়ার জন্য কমিশনের প্রাথমিক বাজেটে রাখা হলেও তারা চাইছে ৪৪৩ কোটি টাকা। তবে তাদের জন্য বরাদ্দ দুইশ’ কোটি টাকাই থাকছে। তাদের জন্য বরাদ্দ টাকার সম্পূর্ণ অর্থই আগাম পরিশোধ করা হবে।
Advertisement
অন্যদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কমিশনের কাছে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য ৩০ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে তা বেড়ে ৩৫ কোটি টাকা হতে পারে। তাদের জন্য বরাদ্দের অর্ধেক টাকা আগাম পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা নির্বাচনের পর সমন্বয় করা হবে।
এ ছাড়া নির্বাচনে কোস্টগার্ডের সদস্যরা কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখারীসহ উপকূলীয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। তারাও মাঠে সাতদিন অবস্থান করবেন। এ বাহিনীর জন্য কমিশন ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে।
সম্প্রতি ইসির সঙ্গে এক বৈঠকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, বিগত নির্বাচনে মোট কেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭ থেকে কিছু বেশি। কিন্তু নির্বাচন হয়েছে ১৮ হাজার ২০৮ কেন্দ্রে। বাকি নির্বাচনী আসনে একক প্রার্থী জয়ী হওয়ায় ভোটের প্রয়োজন হয়নি। ফলে বাড়তি লোকবল প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু এবার ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী, এবার ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দিগুণের চেয়েও বেশি। ফলে দিগুণ জনবল প্রয়োজন। এ ছাড়া বিগত নির্বাচনের তুলনায় এবার ভাতার পরিমাণ বেড়েছে। তাই বিগত সময়ের হিসাব অনুযায়ী বরাদ্দ দিলে সেটি বণ্টনে সমস্যা হবে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীর জন্য ৫৭ কোটি ২৬ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪০ টাকা বরাদ্দ ছিল। পুলিশের জন্য ৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৯ টাকা, বিজিবির জন্য ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩৫ টাকা, আনসার বাহিনীর জন্য ৬৩ কোটি ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৩০২ টাকা বরাদ্দ ছিল।
এইচএস/জেডএ/আরআইপি