অর্থনীতি

অতিরিক্ত বরাদ্দে কেনা হচ্ছে ইভিএম

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার জন্য চলতি অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে এক হাজার ৯৯৮ কোটি ৯ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় বরাদ্দ দিতে পারছে না অর্থ বিভাগ। তাই চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম- এমন প্রকল্প থেকে অর্থ নিয়ে ইভিএম কেনার ব্যবস্থা নিতে পরিকল্পনা কমিশনকে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়।

Advertisement

কিন্তু অগ্রগতি কম- এমন প্রকল্প থেকে অর্থ না নিয়ে ইভিএম কেনার জন্য বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আওতায় অতিরিক্ত দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। গত ১ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশন একটা চিঠি দিয়ে বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে এ কথা জানিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন সচিবালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন নির্বাচনে ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইভিএম ব্যবহার শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পের অনুকূলে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের এডিপিতে (সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ এক হাজার ৯৯৮ কোটি ৯ লাখ টাকা ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাত হতে বরাদ্দ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে চলতি এডিপিতে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা খাতে সরকারি অর্থের (জিওবি) পরিমাণ মাত্র ৫৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা রক্ষিত ছিল। ইতোমধ্যে কতিপয় প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করায় বিবেচ্য প্রকল্পের চাহিদা অনুসারে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপির ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাত হতে জিওবি বাবদ এক হাজার ৯৯৮ কোটি ৯ লাখ কোটি টাকা সংকুলান করার সুযোগ নেই।

তবে প্রকল্পটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হওয়ায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের চাহিদা অনুসারে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার’ শীর্ষক নতুন অনুমোদিত প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৯-১৮ অর্থবছরের এডিপির ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে জিওবি বাবদ রক্ষিত অর্থের অতিরিক্ত দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।

Advertisement

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ইভিএম কেনা নিয়ে কোনো আর্থিক সংকট আছে কি-না আমার জানা নেই। ইভিএম কেনা নিয়ে সরকারের কোনো আর্থিক সংকট নেই বলেও জানান তিনি।

এদিকে অধ্যাদেশ জারির চার দিনের মাথায় ইভিএম বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষে তা গেজেট আকারে জারি করবে ইসি সচিবালয়।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম চালুর আট বছর পর প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। ২০১০ সালের জুন মাসে স্বল্পপরিসরে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ইভিএম চালু হয়। ২০১৫ সালে এসে ওই ইভিএম বন্ধ হয়ে যায়। পরে নতুন ইভিএম তৈরি করে ইসি। ২০১৬ সালে রংপুর সিটি নির্বাচনে তা চালু হয়। এর দুই বছরের মাথায় সংসদ নির্বাচনে এ যন্ত্র ব্যবহারের পথ সুগম করতে আইন সংশোধনের পর বিধিমালাও চূড়ান্ত হলো রোববার।

‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএম বিধিমালা-২০১৮’ এ রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, ভোট গণনা ও ফল একীভূতকরণসহ নানা বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।

Advertisement

নির্বাচন কমিশন বলছে, আইনি ভিত্তি পাওয়ার পর স্বল্পপরিসরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। আগামী নির্বাচনে কয়টি কেন্দ্রে এটির ব্যবহার হবে তা কমিশন চূড়ান্ত করবে। দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে এসব কেন্দ্র বাছাই হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সিইসি।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচনী আইন সংশোধনে প্রস্তাব পাঠানোর পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহারের প্রকল্পটিও গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি।

ওই সময় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত, বিশ্বাসযোগ্য ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করতে দেড় লাখ ইভিএম কেনা হবে। এ প্রকল্পে দেড় লাখ ইভিএম মেশিন কিনতে ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

এমইউএইচ/বিএ