ইংল্যান্ডের কার্ডিফ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য যেন আশীর্বাদস্বরূপ একটি শহর। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনস এক জোড়া সুখ স্মৃতি রয়েছে বাংলাদেশ দলের। ২০০৫ সালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারানোয় এমনিতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে সোফিয়া গার্ডেনস।
Advertisement
গত বছর এই একই মাঠে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক কামব্যাক করে বাংলাদেশ দল। কার্ডিফের ঐতিহাসিকতা আরও পাকাপোক্ত করে নেয় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
২৬৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সেদিন মাত্র ৩৩ রানেই ৪ উইকেট হারালেও সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবিশ্বাস্য জুটিতে ৫ উইকেটের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। সাথে পেয়ে যায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলার টিকিট।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে দেশ ছাড়ার আগে নিদেনপক্ষে সেমিফাইনাল খেলার আশা ব্যক্ত করেছিল পুরো দল। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় কমে যায় আশা। পরে বৃষ্টিতে বাতিল হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ। আবার জ্বলে ওঠে আশার প্রদীপ। সেমিফাইনাল খেলতে হলে শেষ ম্যাচে হারাতেই হবে কিউইদের, এমন সমীকরণই ছিল মাশরাফি-সাকিবদের সামনে।
Advertisement
ম্যাচের দিন সোফিয়া গার্ডেনসে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেলরের ব্যাটে করে বড় সংগ্রহের পথে এগুচ্ছিল কিউইরা। তখনই তুরুপের তাস হিসেবে পার্টটাইম স্পিনার মোসাদ্দেক সৈকতের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি।
সৈকতের আনকোরা স্পিনের সামনেই নাজেহাল হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। ৪০ ওভারের পরে বোলিংয়ে এসে ৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ১৩ রান খরচায় নেইল ব্রুম, জিমি নিশাম এবং কোরি এন্ডারসনের উইকেট তুলে নেন সৈকত। টেলরকে ফেরান তাসকিন, রানআউটে কাঁটা পরেন উইলিয়ামসন। একসময় ৩০০ রানের চোখ রাঙানি দেয়া কিউই ইনিংস থেমে যায় ২৬৫ রানেই।
আসরের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫ রান করায় এই রান তাড়া করা খুব একটা কঠিন হওয়ার ছিল না বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু বিধিবাম! রান তাড়া করতে নেমে টিম সাউদির তোপে মাত্র ১২ রানের মাথায়ই সাজঘরে ফিরে যান তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার এবং সাব্বির রহমান।
প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয়ার পথে দলীয় ৩৩ রানের মাথায় সাজঘরের পথ ধরেন মুশফিকুর রহিমও। ৩৩ রানে প্রথম ৪ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে জয়ের বন্দর তখন দূরের বাতিঘর। তবু ঘাবড়ে না গিয়ে পঞ্চম উইকেটে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, অ্যাডাম মিলনেদের পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে লড়াই শুরু করেন এই দুই ব্যাটসম্যান।
Advertisement
ধীরে ধীরে দেখা মেলে দূরের বাতিঘরের। প্রথমে পঞ্চাশ, পরে একশ, পরে দেড়শ পেরিয়ে দুইশ রানের জুটি গড়ে ফেলেন এই দুজন। মাত্র ৩৩ রানে ৪ উইকেট থেকে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ তখন ২৩৩ রানে ৪ উইকেট। দুইশ রানের জুটি গড়েই থেমে যাননি দুজন। দলকে নিয়ে যান দলের আরও কাছে।
জয় থেকে মাত্র ৯ রান দূরে থাকতে ২২৪ রানের জুটি ভাঙে সাকিব আল হাসানের বিদায়ে। তবে আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের ৭ম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। ১১৫ বলে খেলেন ১১৪ রানের ইনিংস। সাকিব ফিরলেও দলকে জয়ের বন্দরে নিয়েই থামেন রিয়াদ।
অসাধারণ কামব্যাকের ইনিংসে ১০৭ বল খেলে অপরাজিত ১০২ রান করেন রিয়াদ। সাকিবের সাথে তার ২২৪ রানের জুটিটি যেকোন উইকেটে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রানের জুটি। ইনিংসের ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে থার্ডম্যান দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন বল হাতে কিউইদের বেঁধে রাখা মোসাদ্দেক সৈকত।
বাংলাদেশ পায় ঐতিহাসিক জয়, গড়ে অনন্য সাধারণ কামব্যাকের দৃষ্টান্ত। মাত্র ৩৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে যেখানে একশ’র নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কা উঁকি দিতে থাকে সেখানে ১৬ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ইতিহাস গড়া এই কামব্যাকের ম্যাচটি হয়েছিল আজকের তারিখ থেকে ঠিক ৩৬৫ দিন আগে ২০১৭ সালের ৯ জুন তারিখে।
এসএএস/জেআইএম