গত ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ। ওই দুর্ঘটনায় ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৫১ জন নিহত হলেও বেঁচে যান শেহরিন আহমেদ। গত ১৫ মার্চ শেহরিনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
Advertisement
মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসা সেই শেহরিন আজ রোববার হাসপাতাল ছেড়েছেন। যাওয়ার আগে তার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। শেহরিন বলেন, ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে আসার অভিজ্ঞতা অন্যরকম এবং এটি কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
‘আফটার টুয়েন্টি ডেইজ আই অ্যাম গোয়িং মাই হোম। এত দিন এখানে একা থেকে বাসায় ফিরছি, দিস ইজ অবভিয়াসলি এক্সাইটেড ফর মি। এখন আপনাদের কাছে আমি এটাই দোয়া চাই যে, আমরা যারা বেঁচে আছি আমাদের সবার জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন সুস্থ হয়ে নরমাল লাইফে ব্যাক করতে পারি।’
রোববার দুপুর ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাসায় ফিরেছেন তিনি। এর আগে সকাল ১০টার দিকে আহতদের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে ছাড়পত্র দেন।
Advertisement
নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় আহত দশ বাংলাদেশির সাতজনকে চিকিৎসার জন্য আনা হয় ঢামেকের বার্ন ইউনিটে। এখান থেকে ইতোমধ্যে -মেহেদী, স্বর্ণা ও রুবাইত নামে তিনজন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। এছাড়া চিকিৎনাধীন অবস্থায় মারা যান শাহীন বেপারি নামে একজন।
অপর আহত কবির হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে। আর এখনও মানসিক সমস্যায় থাকায় কামরুন নাহার এ্যানীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন পুরোপুরি সুস্থ হতে তাকে আরও কিছু দিন থাকতে হবে।
শেহরিন বলেন, আমি মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। মৃত্যু কত ভয়ানক তা আমার চেয়ে ভালো কেউ বলতে পারবে না.. যদি না কেউ এমন ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়। আমি দেখেছি কিভাবে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমারই চোখের সামনে তিনজন মানুষ মুহুর্তেই ফ্ল্যাশ (ছাই) হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এমন দৃশ্য দেখে আমি কখনই ভাবিনি বেঁচে ফিরব। আমাকে যখন বের করতে দেরি হচ্ছিল তখনই ভাবলাম আর বাঁচব না। চারদিকে অন্ধকার দেখতে পাচ্ছিলাম। আর সেই সঙ্গে ধোঁয়ার গন্ধ। তারপর কখন চোখ বুঝেছিলাম কিছুই বলতে পারব না। এরপর আপনাদের দোয়ায় এবং মানসিকভাবে শক্ত থাকায় হয়তো আল্লাহ আমাকে দ্বিতীয়বার জীবন দিয়েছেন।
Advertisement
‘জ্ঞান ফেরার পর দেখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। চারপাশে কয়েকজন চিকিৎসক দাঁড়িয়ে আছেন।’
তিনি বলেন, মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসে চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে এখন বাসায় ফিরছি। এটি আমার কাছে অনেক বেশি আনন্দের। অনেক বড় পাওয়া। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সুস্থ হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি। যে জীবন আপনাদের দোয়া এবং ভালোবাসায় পেয়েছি সে জীবন শুধু দেশবাসীর সেবায় নিয়োজিত রাখতে চায়।
উদ্ধারকর্মী থেকে শুরু করে সিনিয়র-জুনিয়রসহ সকল চিকিৎসক ও নার্স এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আহতদের ছাড়পত্র দিতে পেরে ঢামেকের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জাগো নিউজকে বলেন, তাদের সুচিকিৎসা দিয়ে বাসায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া একজন চিকিৎসকের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তিতে আমরা সকলে অনেক খুশি। বাকি আহতরাও দ্রুত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
এসএইচ/এনএফ/জেআইএম