অর্থনীতি

ব্যাংকে ভর করে সূচকের বড় লাফ, বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন

দীর্ঘদিন পর দেশের শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দাপট দেখিয়েছে ব্যাংক কোম্পানিগুলো। এতে মূল্যসূচকের যেমন বড় উত্থান হয়েছে, তেমনি বেড়েছে লেনদেনের গতি। চলতি বছরে প্রথমবারের মতো লেনদেন ৬০০ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করেছে।

Advertisement

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩টি বাদে সবকটি ব্যাংকের শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কোনো ব্যাংকের শেয়ার দাম কমেনি।

ব্যাংক কোম্পানিগুলোর এমন দাপটের ফলে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। তবে মধ্যম মানের কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগের শেয়ার দাম কমেছে। আর অধিকাংশ ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। পচা বা ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বাড়া এবং কমার সংখ্যা প্রায় সমান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে বাজারটিতেও মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। তবে বাজারটিতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

Advertisement

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি থাকে ‘এন’ গ্রুপে। তালিকাভুক্তির পর একটি আর্থিক বছর পার হলে কোম্পানিগুলো ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘জেড’ গ্রুপে বিভক্ত হয়।

এর মধ্যে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির স্থান হয় ‘এ’ গ্রুপে। ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি থাকে ‘বি’ গ্রুপে। আর লভ্যাংশ না দিতে পারা কোম্পানির স্থান হয় ‘জেড’ গ্রুপে। জেড গ্রুপের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের পচা কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ‘এ’ গ্রুপের ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১২৩টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৭১টির এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ‘বি’ গ্রুপের ৩০টি কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। আর কমেছে ৪৩টি এবং ৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ১৩টির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ১০টির কমেছে এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ‘জেড’ গ্রুপের ৯৯টি কোম্পানির মধ্যে ৪৩টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৪২টির এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে ‘এন’ গ্রুপে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

Advertisement

বেশিরভাগ ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার দিন ডিএসইতে সব খাত মিলিয়ে ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৬টির। এছাড়া ৪৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এই দাম বাড়ার তালিকা বড় করতে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক। তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৩টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বাকি তিনটির শেয়ার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ব্যাংকের শেয়ারের এমন দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৬৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে চলতি বছরের সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৬২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত বছরের ৬ নভেম্বরের পর ডিএসইতে ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।

এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ২১ টাকার। ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকস।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, ওরিয়ন ইনফিউশন, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, এনআরবি ব্যাংক, আরডি ফুড এবং ইসলামী ব্যাংক।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৩৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮২টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এমএএস/এমআইএইচএস