সময়টা ২০১৩ সালের প্রথমদিন। হাতিরঝিল প্রকল্প উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা আপনাদের নববর্ষের উপহার। এরপর রাজধানীবাসীর কাছে বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে এই হাতিরঝিল।
Advertisement
যে কোনো উৎসবেই বা সরকারি ছুটির দিনে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল নামে এখানে। উৎসবের দিন ৩০২ একরের হাতিরঝিলে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না বললেও ভুল হবে না।
সোমবার মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিকেল ৫টার পর মানুষের পদচারণায় হাতিরঝিল প্রায় কানায় কানায় ভরে ওঠে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে আসেন।
পাশাপাশি হকারদেরও কমতি নেই। রকমারি খেলনা, বেলুন, হরেক রকমের বাঁশি, ডুগডুগিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের পসরাও বসে। বাদ যায়নি খাবারের হকাররাও।
Advertisement
হাতিরঝিলে ঘুরতে আসাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাতিরঝিলে মানুষের ভিড় খুবই কম ছিল। তবে বিকেল ৫টার পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। আর ৬টার পর একপ্রকার জনসমুদ্রে পরিণত হয় হারিঝিল। ভেতরের রাস্তা, ব্রিজ, ওভারব্রিজ, দুই পাড়ের সংযোগ ব্রিজ সর্বত্রই উপচেপড়া ভিড়। একজনের সঙ্গে অন্যজনের ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি ছাড়া কোনো স্থান দিয়েই স্থিরভাবে হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই।
বিনোদনের পাশাপাশি হাতিরঝিলে ঘুরতে এসে কেউ কেউ বিড়ম্বনায়ও পড়েছেন। বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ বিনোদনকেন্দ্রটির ভেতরে বিশেষ অভিযান চালায় ট্রাফিক পুলিশ। এতে মামলার শিকার হন বেশ কয়েকজন। কারও কারও মোটরসাইকও আটকে রাখা হয়।
নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে হাতিরঝিলে এসে ধরা খাওয়া একজন বলেন, নতুন বিয়ে করেছি। মোটরসাইকেলও নতুন কিনেছি। এখনও গাড়ির কাগজ পাইনি। ওই মোটরসাইকেলে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকে রেখেছে। বলছে কাগজ না দেখাতে পারলে ছাড়বে না। এখন তো আমি বিপদে পড়েছি, কোম্পানি এখনও আমাকে গাড়ির কোনো কাগজ দেয়নি।
ট্রাফিক পুলিশের এই অভিযান ছাড়া হাতিরঝিলের ভেতরের পরিবেশ বেশ উৎসবমুখরই ছিল।
Advertisement
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মিরপুর থেকে আসা মো. কামাল হোসেন বলেন, রাজধানীবাসীদের কাছে হাতিরঝিল একটি অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে পরিণতা হয়েছে। ছুটিতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। আমি এর আগেও এখানে এসেছি। এই বিনোদনকেন্দ্রটিতে হয়তো দেখার মতো তেমন কিছু নেই, তবুও ঘুরতে আসা। কারণ এখানে আসলে অন্যরকম ভালো লাগে।
ফার্মগেট থেকে বন্ধুর সঙ্গে আসা এলিনা বলেন, এই যান্ত্রিক নগরীতে এমন একটি বিনোদনকেন্দ্র পাওয়া সত্যিই আশীর্বাদ। আমরা প্রায় প্রত্যেক ছুটির দিনই এখানে আসি। উন্মুক্ত পরিবেশের আলো-বাতাস এবং এখানকার পরিবেশ আমার খুব ভালো লাগে। এই ভালো লাগার টানেই ছুটে আসি। তবে এখানে কিছু শঙ্কাও আছে। ফাঁকা রাস্তায় কিছু মোটরসাইকেল বেপরোয়া গতিতে ছুটে যায়। এতে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হাতিরঝিলে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি চালানো বন্ধ করা উচিত।
এমএএস/জেডএ/পিআর