জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের (লিভ টু আপিল) ওপর শুনানি শেষ হয়েছে।
Advertisement
এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করেছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।
রোববার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে শুনানি চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম, খালেদা জিয়ার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এ জে মোহাম্মদ আলী।
শুনানিতে তিনি বলেন, মামলায় সব আসামির ১০ বছর করে সাজা হলেও শুধু খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। এখানে বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার বয়স ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় আনা হয়েছে। এখন জামিনের ক্ষেত্রেও আসামির প্রতি কনসিডারেশনের বিরোধীতা করেন তিনি। জামিন বাতিলে তিনি বিভিন্ন নজির উপস্থাপন করেন।
Advertisement
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদা জিয়ার হাইকোর্টে দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে বক্তব্য পেশ করেন।
তিনি বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রমে বিচারিক আদালতের প্রতি অনাস্থা এবং মামলাটি বাতিল ও স্থগিতে বিভিন্ন সময় আসামিপক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। মামলার পেপার বুক প্রস্তুতে হাইকোর্ট যে চার মাসের সময় দিয়েছে তা দুই মাস করতে আর্জি পেশ করেন।
খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখার পক্ষেও বিভিন্ন যুক্তি এবং নজির তুলে ধরে শুনানি করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
Advertisement
৮ ফেব্রুয়ারি কারাদণ্ডের রায়ের পর থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারারসন খালেদা জিয়া।
নিম্ন আদালত থেকে ওই মামলার নথি হাইকোর্টে আসার পর তা দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১২ মার্চ খালেদার চার মাসের অন্তবর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। সঙ্গে সঙ্গে তার আপিল শুনানির জন্য ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপার বুক প্রস্তুত করারও নির্দেশ দেন।
এরপর ১৫ মার্চ ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড পেয়ে কারাগারে থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ চার মাসের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
আদেশে-বেগম খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিন, পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপার বুক প্রস্তুত করারও নির্দেশ দেন আদালত। পেপার বুক প্রস্তুত হওয়ার পর যেকোনো পক্ষ চাইলে আপিল শুনানির জন্য আদালতে মেনশন (উপস্থাপন) করতে পারবে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া আদেশে বলা হয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নিম্ন আদালতের নথি আসার পর খালেদা জিয়ার জামিনের আদেশের জন্য ঠিক করেন।
দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্ট গ্রহণ (অ্যাডমিট) করেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি। একই সঙ্গে, বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানাও স্থগিত করা হয়। পাশাপশি নিম্ন আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে পাঠাতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর গত ১১ মার্চ রোববার এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি উচ্চ আদালতে পৌঁছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। হাইকোর্টে করা আপিলে ১ হাজার ২২৩ পৃষ্ঠার নথি-পত্রসহ (ত্রিমিনাল আপিল নং: ১৬৭৬/২০১৮) করা হয়।
আপিল আবেদনে নিম্ন আদালতের পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৪টি বিভিন্ন ধরনের যুক্তি দেখানো হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য সিনিয়র অ্যাভোকেট আব্দুর রেজাক খান ফাইলিং ল’ ইয়ার হিসেবে এ আপিল মামলা দায়ের করেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পরের দিন ১১৬৮ পৃষ্ঠা ও আদেশ ৬ পৃষ্ঠাসহ মোট ১১৭৪ ফোলিও প্রিন্ট (রায়ের অনুলিপি) খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে দেয়া হয়।
প্রকাশিত এ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।
এফএইচ/এনএফ/এমএস/এমআরএম